এমপিও’র আশায় যুগ পার কক্সবাজারের শিক্ষক-কর্মচারীরা

এম. বেদারুল আলম :

বিদ্যালয় এমপিও হবে, পরিবারে আসবে স্বচ্ছলতা এমন আশায় যুগ পার করেছেন জেলার অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারিরা। এমপিও’র (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) জন্য বেশ কয়েক বছর যাবৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজের অনেক শিক্ষক। সরকার নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে আশায় বুক বাধঁছেন ভাগ্যাহত উক্ত শিক্ষক পরিবার। আওয়ামী লীগে সরকারের গত মেয়াদে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫’শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজ সরকারিকরণ হওয়ায় এমপিও বঞ্চিতরা পুনরায় আশাবাদী হয়েছেন। তাদের চাওয়া সরকার তাদের এমপিও অথবা প্রতিষ্ঠান সরকারি করলে বেঁেচ যাবেন স্বপরিবারে।
জানা যায়, গত বছর ১৭ নভেম্বর ঢাকায় এমপিওভুক্তির দাবিতে কাফনের কাপড় পরে সমাবেশ করলে ও এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকরা দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়।
জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জারাইলতলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসাইনুল ইসলাম মাতবর জানান, সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতিয়করণ ও নন এমপিও শিক্ষকদের এমপিওকরণের দাবিতে গত ৮ ফেব্রয়ারি তলাতলির লংবীচ হোটেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে আমরা বেসরকারি শিক্ষকরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। যেসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি নীতিমালা এবং সরকারের শর্ত পূরণ করেছে তাদের যেন দ্রুত এমপিও করে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আশাকরি সরকারের উদ্যোগ আমাদের ২ হাজার পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটাবে। তা নাহলে আগামি মাসে জাতীয় কর্মসূচির সাথে কক্সবাজরের শিক্ষকগন আন্দোলনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর এমপিও’র জন্য আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম।

জেলা শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় এমপিও’র আশায় বছরের পর বছর নামমাত্র বেতনে চাকুরি করে যাচ্ছেন প্রায় ২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারি। ১৪/১৫ বছর আগে সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর ও এমপিও হয়নি জেলার শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দাখিল মাদ্রাসা। ফলে চাকুরী স্থায়ীকরণের আশায় প্রহর গুণছেন উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। এমপিও’র আশায় বছরের পর বছর উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টানসমুহে জীবন পার করে এখন সরকারি চাকুরিতে ও আবেদন করতে পারছেনা অসহায় এ সব শিক্ষকগণ। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন যাবৎ এমপিও ভূক্তির জন্য আন্দোলন করে আসলে ও ফলাফল শূন্য। এমপিও ভূক্তির জন্য জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসাবে গেল বছরের ১ অক্টোবর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সহ কঠিন কর্মসূচী পালন করলে ও সরকার অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।
 জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ১১টি এবং দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে ২০টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক বেতন এবং  সাহায্য সহযোগিতায় চলছে প্রায়  ২হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর পরিবার। এমপিও’র (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) আশায় অনেকে বারো থেকে পনের বছর যাবৎ স্বল্প বেতনে শিক্ষকতা করে আসলেও পরিবারে চলছে অভাব অনটনসহ সীমাহিন সমস্যা। গেল বছর এমপিও’র অগ্রাধিকার তালিকা থেকে শতভাগ ফলাফল অর্জনকারী ১২টি স্কুল এবং মাদ্রাসা বাদ পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

এদিকে দীর্ঘদিন যাবৎ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অথচ এমপিও বঞ্চিত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান হল (বিদ্যালয়) সদর উপজেলায় ৬টি, উখিয়া উপজেলায় ২টি, টেকনাফ উপজেলায় ২টি, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৩টি, মহেশখালীতে ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে জেলায় আরো ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। জেলায় বর্তমানে ১৩০টি এমপিও ভূক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এমপিও বঞ্চিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, এমপিও পেতে সরকার যে সকল নীতিমালা ও সুযোগ সুবিধা চেয়েছে সব পূরন করেও দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা এমপিও পাচ্ছিনা। প্রতিবছর স্কুল ও  মাদ্রাসার দাখিলের ফলাফল সন্তোষজনক হলেও আমাদের মত আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিও না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তিনি এমপিও প্রদানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অপরদিকে জেলায় স্বীকতিপ্রাপ্ত দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে ১৯টি। এদের মধ্যে ৭টি মাদ্রাসার দাখিলে পরপর ৩ বছর শতভাগ উত্তীর্ণের ফলাফল রয়েছে। তবুও তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। এমপিও’র অপেক্ষা বেড়েছে। জেলায় এমপিও’র অপেক্ষায় থাকা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উপজেলা ভিত্তিক দাখিল মাদ্রাসার সংখ্যা হল সদর উপজেলায় ৮টি, রামুতে ১টি, চকরিয়ায় ৩টি, উখিয়ায় ২টি, টেকনাফে ৪টি, মহেশখালীতে ১টি সহ মোট ১৯টি দাখিল মাদ্রাসা। এছাড়া জেলায় এমপিওভূক্ত দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে ৯১টি। স্বীকৃতিবিহীন মাদ্রাসা রয়েছে ২৩টি। জেলায় সর্বমোট ১৩৩টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে।

অবকাঠামোগত সুবিধা মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত সকল শর্ত পূরণের পরও দীর্ঘদিন যাবৎ অপেক্ষায় থাকা জেলার উক্ত শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও’র জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এমপিও বঞ্চিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ। মানবিক বিবেচনায় জেলার শতাধিক শিক্ষক – কর্মচারির পরিবারের প্রায় ২ হাজার সদস্যদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন চাকুরি স্থায়িকরণ জরুরি। সরকার এ মেয়াদে এমপিওভুক্ত করলে ‘হালে পানি’ পাবে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষক পরিবার।