কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯২ জন

আজিম নিহাদ :

ক’দিন আগেও সুস্থ ছিলেন বিজিবি ক্যাম্প এলাকার ইমরান (২১)। কথা ছিল বাড়িতে পরিবারের সাথে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কাটবে কোরবানের ঈদ। হাটে পশু কিনতে যাওয়া, আয়োজন করে পশু জবাই, পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীদের সাথে কোরবানির মাংস ভাগাভাগিসহ আরও কত কি…। কিন্তু এক ডেঙ্গুতে সবকিছুই ম্লান। এখন বাড়িতে আনন্দে কাটানোর পরিবর্তে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শয্যায় কাটবে ইমরানের নিরানন্দ ঈদ।

সিভিল সার্জনের হিসাবমতে, কক্সবাজার জেলায় (শনিবার সকাল ৯টা) এখন পর্যন্ত ৯২ জন ডেঙ্গু রোগি শনাক্ত হয়েছে। কিছু কিছু রোগি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো অনেকে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছে। কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মাত্র একজনের। ঢাকায় আক্রান্ত কক্সবাজার এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছিল ওই রোগির। মূমুর্ষ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চমেকে রেফার করা হয়েছে শনিবার পর্যন্ত ৫ জনকে।  
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগিরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি ফেরায় গত কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। গত তিনদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ জন। এরমধ্যে শনিবার সকাল ৯টার পর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭ জন। ঈদের সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আক্রান্ত হওয়া রোগিরা কক্সবাজারে চলে আসায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ পঙ্কজ পাল বলেন, জেলায় শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮জন রোগি শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই ২৪ ঘণ্টায় কুতুবদিয়াতেও একজনের ডেঙ্গু জ¦র সনাক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ৭৭ জন। সেখান থেকে বর্তমানে শনিবার রাত পর্যন্ত ভর্তি রোগি ছিল ২৮ জন। এরমধ্যে শনিবার সকাল ৯টার পর নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৭ জন। ৭ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগিদের প্রতি আলাদা নজর রাখা হয়। স্পেশালভাবে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। একারণে রেফার ও মৃত্যুর সংখ্যা একেবারেই নগন্য। ধীরে ধীরে অধিকাংশ আক্রান্ত রোগি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সবাই যদি একটু সতর্ক হয় তাহলে দ্রুত প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন বাড়ি ফেরার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার হঠাৎ বেড়ে গেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের জন্য কীটসহ সবকিছু পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ঈদের সময়ে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালের ল্যাবও চালু থাকবে।

ডা. মহিউদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেই হিসেবে ঈদের সময়েও চিকিৎসক, নার্সসহ সবাই ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগিদের চিকিৎসায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। বিশেষ করে মুঠোফোনে ‘ডেঙ্গু হেল্প ডেস্ক’ থেকে সার্বক্ষণিক পর্যটকসহ সবাইকে ডেঙ্গু রোগের সেবা প্রদান করবেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ডেঙ্গু সেল সার্বক্ষণিক ডেঙ্গু আক্রান্তদের সেবা নিশ্চিতে কাজ করবে। তাই প্রকোপ বাড়লেও মোকাবেলায় তেমন কোন সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও ঈদের সময়ে সার্বক্ষণিক ডেঙ্গু রোগিদের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও পৌরসভারও ছুটি বাতিল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে পর্যটক ও স্থানীয়দের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এসব প্রতিষ্ঠান।