ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ আতংকে রোহিঙ্গারা

শফিক আজাদ, উখিয়া :

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ আতংকে ভোগছে। যে কোনো মুহুর্তে এ রকম দুর্ঘটনায় নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন। এমনিতেই আশংখা করছেন রোহিঙ্গারা। এনজিও সংস্থা কোন প্রকার সচেতনতা সৃষ্টি না করে রোহিঙ্গাদের মাঝে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করায় এসব আতংকে রয়েছেন তারা। এছাড়াও বুধবার সকালে টেকনাফ লেদা ক্যাম্পে হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাতে হাসিনা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারীর ঘর সহ আশপাশে ২০টি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়।

উখিয়ার বালূখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী উম্মে কুলসুম বলেন, তার ছোট্ট একটি ঘরে এগারো সদস্যের বসবাস। যে ঘরে রয়েছে বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা। তিনি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে এক এনজিও নারী কর্মী থেকে জেনে নিয়েছেন। তবে অনেকেই সঠিক ব্যবহার জানেন না। শুনেছি গ্যাস সিলিন্ডার একটি শক্তিশালী বোমা। তাই সব সময় সতর্ক হয়ে এটি ব্যবহার করি। বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় ক্যাম্পে প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার দেয়া হচ্ছে। এনজিওদের এটির ব্যবহার বিধি সবাইকে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি।

ময়নাঘোনা ক্যাম্পের সেতারা বেগম ও মায়েশা বলেন, আমরা এখানে এখনো গ্যাস সিলিন্ডার পায়নি। তবে কয়েকদিনের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা তা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানিনা। বিভিন্ন ক্যাম্পে দূঘর্টনার কারনে আমরাও আতংকে আছি।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার জাকির হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটলে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, লোকবল সংকটসহ একটি মাত্র পানির গাড়িতে এ ধরণের দুর্ঘটনা সামাল দেয়া মুসকিল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা এনজিওদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও তাদের প্রাণ রক্ষায় নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বাড়ানোসহ অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জমাদির ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। যে কোনো বাসাবাড়ি কিংবা সড়কে চলা যানবাহন-সর্বত্রই এভাবে মৃত্যুফাঁদ হয়ে আছে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার। বিস্ফোরণ রোধে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার পূণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে আইন করা প্রয়োজন। তবে আমরা ক্যাম্পে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

রোহিঙ্গারা জানায়, টেকনাফ লেদা ক্যাম্পে বুধবার সকালে হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রথমে হাসিনা বেগমের ঘরে আগুন লাগে। পরে আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে রোহিঙ্গারা বালতি, মগ ইত্যাদি দিয়ে পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ২০টি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে যায়। তবে কেউ দগ্ধ না হলেও ঘরে থাকা বিভিন্ন পণ্য আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে।

টেকনাফ নিবন্ধিত নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, ‘লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে আবদুল সালাম নামে এক স্থানীয় ব্যক্তির জমিতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিবিরে যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নজর রাখছে।