ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব: ৭ জনের মৃত্যু

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক *

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সঙ্গে চলছে তীব্র ঝোড়ো বা দমকা হাওয়া। উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ছে ঘরবাড়ি ও গাছপালা। বেশ কয়েকটি জেলা বিদ্যুৎহীন আছে। এ অবস্থায় এ পর্যন্ত বরিশাল, ভোলা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামে মোট সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

রবিবার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে সোমবার (২৭ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন জেলা প্রতিনিধিরা।

বরিশাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে নগরীর রুপাতলী এলাকায় চারতলা ভবনের সাইড দেয়াল ধসে পার্শ্ববর্তী হোটেলের ওপর পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। তারা হোটেল মালিক লোকমান হাওলাদার ও কর্মচারী মোকসেদুল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন শাকিব। তারা নগরীর রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা।

হোটেল মালিকের ছেলে মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, ভোর রাত ৩টার দিকে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী চারতলা ভবনের ওপর থেকে দেয়াল ধসে দোকানের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তার বাবা এবং এক কর্মচারী নিহত হন। অপর কর্মচারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঝালকাঠির নলছিটির বাসিন্দা নুরুল হকের চারতলা ভবনের কার্নিশ ঘেঁষে দেয়ালটি করা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে দেয়ালের বেশিরভাগ অংশ দোকানের ওপর ধসে পড়ে।

জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওই দুই পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ভবন মালিকের কোনও ত্রুটি আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিচুল হক জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনের লাশ এবং একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, দৌলতখানে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ঘরের ভেতর গাছ চাপা পড়ে মাইশা (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) ভোর ৪টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাইশা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনির হোসেনের মেয়ে। এর আগে ভোরে ঘূ‌র্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঘর চাপা পড়ে মনেজা খাতুন (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ঝড়ে জেলায় দুজনের মৃত্যু হলো।

শিশুর বাবা মনির জানান, রবিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ একটি গাছ আমার ঘরের ওপর চাপা দেয়। এতে টিনের চাল আমাদের ওপর চাপা পড়লে মাইশা মারা যায়। আমিও চাপা পড়েছিলাম, স্থানীয়রা এসে উদ্ধার করেছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বসতঘরে চাপা পড়ে মারা যান মনেজা খাতুন। তিনি লালমোহন উপজেলার চর উমেদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, রাতে মনেজা খাতুন তার এক নাতিকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে ঝড়ো বাতাসে তার টিনের ঘর ভেঙে চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনেজা। তবে অক্ষত আছেন তার নাতি।

এ বিষয়ে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্যরঞ্জন খাসকেল বলেন, ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মৃত দুজনের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

অপরদিকে, ঝড়, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়ির আশপাশের সব ফসল লোনাপানিতে ডুবে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, মনপুরা, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ১০টি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল নামে এক বৃদ্ধ মারা যান।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, একইদিন বিকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপ‌জেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্লা‌বিত এলাকা থেকে বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফুল ইসলাম নামে একজনের মৃত্যু হয়।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল এলাকায় দেয়াল চাপায় মারা গেছেন সাইফুল ইসলাম হৃদয় নামের এক পথচারী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় একটি দেয়ালের পাশে আশ্রয় নেন হৃদয়। হঠাৎ দেয়ালটি ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে মারা যান তিনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে।