জেলায় পুরোদমেই জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট

সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল

কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলার ৪৪ টি কোরবানীর পশুর হাট পুরোদমেই বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন পূর্বে কোরবানির পশুর হাটে গরু-মহিষ বাড়লেও ক্রেতার সমাগম কম ছিলো। ওই সময় বিক্রি না হওয়ায় হতাশ ছিলো গরু বেপারীরা।

কিন্ত আজ (শুক্রবার) বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি বিক্রি হওয়ার পশু বেপারীর ও বিক্রেতাদের মূখে হাসি ফুটেছে। দু’একদিন আগে বিক্রি কম হলেও গতকাল থেকেই জমজমাট হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতা ও ইজারাদারেরা।

পাশাপাশি উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার কোরবানীর মাংস যোগান দিতে এনজিও সংস্থাগুলো পশুর হাটে নেমে পড়ায় শেষ সময়ে পশু সংকটে পড়তে পারে বলে জানান কক্সবাজারের সচেতন মহল।
কক্সবাজার পৌরসভায় গতকাল শুক্রবার থেকে কোরবানির হাট জমে উঠেছে।

গত বুধবার থেকে জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন হাটে পশু বিক্রি প্রায় জমে উঠতে শুরু করে। হাটগুলোতে মিয়ানমারের গরু দেখা গেলেও ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি দেশি গরুর প্রতি।

শহরের একমাত্র পশুর হাট বসেছে রুমালিয়ারছড়া খুরুশকুল রাস্তার মাথাস্থ চৌধরী ভবনের সামনে। এই হাটটি ৮ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) বেচাকেনা শুরু হলেও প্রথমদিন তেমন বিক্রি না হলেও দ্বিতীয় দিন জমাজমাট বিক্রি হয়েছে বলে জানান, ইজারাদারেরা। এই হাট থেকে পৌরবাসী ছাড়াও কক্সবাজার সদর উপজেলার মানুষ কোরবানির পশু কিনছেন। কোরবানি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এ হাটে পশু বেচাকেনা চলবে।

শুক্রবার বিকেলের দিকে এই হাটে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দুপাশে নির্ধারিত স্থানে সারিবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে গরু। লোকজন ঘুরে ঘুরে গরুর দরদাম করছেন। পছন্দ হলেই কিনে নিচ্ছেন।

রুমালিয়ারছড়ার পশুর হাটে পৌরসভার এসএমপাড়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমি যে গরুটি নিয়ে এসেছি তার নাম কালু। গরুটির দাম দিয়েছি ৬ লাখ টাকা, ক্রেতারা চেয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা, কিন্ত ৪ লাখ টাকা হলেও আমি বিক্রি করবো। এর আনুমানিক মাংস হবে ১৪ থেকে ১৫ মণ। তিনি গুরটি এনেছিল উখিয়া থেকে। ওই হাটের রহিম নামে বিক্রেতা বলেন, অনেক মানুষ আছে যারা দেশি গরু কোরবানী দেন। একারণে মিয়ানমারের গরুর চেয়ে দেশি গরুর চাহিদা বেশি।

রুমালিয়ারছড়াস্থ বাজার থেকে শুক্রবার দেশি গরু কিনেছেন বাহারছড়ার এলাকার আব্দুল কাদের। যে গরুটি নিয়েছি তাঁর দাম ৫৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই দেশি গরু কোরবানি দিই। তাই এবছরও দেশি গরু কিনেছি।

এছাড়াও জেলার বেশ ক’টি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়-কোরবানী পশুর দাম বেড়েই যাচ্ছে। প্রায় আড়াই লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা পরিবার কোরবানী পশুর মাংস যোগান দিতে টান পড়তে পারে স্থানীয় চাহিদায়। ইতোমধ্যে এররেশ পড়েছে কোরবানীর পশুর হাটে। মাত্র একসপ্তাহ না যেতেই প্রতিটি পশুর দাম ৫, ১০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দু’মন ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। আড়াই থেকে তিন মন ওজনের গরুর দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আর চার থেকে ৬ মন ওজনের গরু মহিষের দাম ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাকাচ্ছে পশু খামারীরা।

এবার জেলায় ৪৪টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে এখনও বেচাকেনা পুরোদমেই শুরু হয়েছে। তাই ক্রেতা ও ব্যাপারীরা মুখে হাসি ফুটেছেন।

সদরের খরুলিয়া বাজারের গরু ব্যবসায়ী মো. আব্দু সালাম বলেন, মিয়ানমারের গরুর চেয়ে দেশি গরুর মাংসের স্বাদ ভালো হওয়ায় এই গরুতে ক্রেতাদের আগ্রহ একটু বেশি। তাছাড়া মিয়ানমারের গরুতে অনেক সময় বিভিন্ন রোগ থাকে। তাই নিরাপদে কোরবানী করার জন্য দেশি গরু ক্রয় করে লোকজন।

শনিবার ও রবিবার ঈদগাঁও বাজারে ২৪ ঘন্টা বেচাকেনা চলবে। ওই বাজারে দেশি গরুর পাশাপাশি মিয়ানমারের গরুর যথেষ্ট ভীড় হতে পারে। কিন্তু তারপরও এই হাটে দেশি গরুর বিক্রি বেশি হবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার।
রামুর কলঘর পশুর হাটে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা গরু এনেছেন ব্যবসায়ী মো. কাজল। তিনি বলেন, অনেকে কোরবানিতে বড় গরু কিনতে চান। মিয়ানমারের গরু বড়। দামেও তুলনামূলক কম।

বাজারে দুটি গরু নিয়ে এসেছেন আরেক ব্যাপারী জসিম উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘দুটি গরু নিয়ে বাজারে এসেছি। এখনও বিক্রি হয়নি। ছয় মাস আগে দুটি গরু কিনেছিলাম আড়াই লাখ টাকায়। এই ছয় মাস লালন-পালন করে বাজারে নিয়ে এসেছি।’ গরু দুটি লাখ টাকার কম বিক্রি করলে লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন এই বিক্রেতা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, জেলার ৪৪টি কোরবানীর পশুর হাটে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। জালনোট সনাক্তকরণের মেশিন বসিয়েছে ব্যাংকগুলো। পশুর স্বাস্থ্য নিরিক্ষণে রয়েছে মেডিকেল টিম।