টেকনাফে আড়ালে থাকা শীর্ষ ইয়াবা কারবারীদের ধরবে কে ?

হুমায়ুন রশীদ,টেকনাফ

কক্সবাজারের টেকনাফে সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্নসমর্পণ করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের সেফহোমে যাওয়া ইয়াবা কারবারী ১শ ২০জনের আত্নসমর্পণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সরকারের বিশেষ বিবেচনার ফলে সীমান্তের যাবতীয় অপরাধীরা অপরাধ ত্যাগ করে সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস আর সহযোহিতায় সীমান্ত জনপদকে মাদক চোরাচালান ও মানব পাচারের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

কিন্তু এত অভিযানের মধ্যেও মুখোশধারী ভিআইপি, সিআইপি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী, সোর্স ও মিডিয়া কর্মীর আড়ালে থাকা মাদক কারবারীদের অপতৎপরতা অব্যাহত থাকায় তাদের কখন আইনের আওতায় আনা হবে তা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়,১৬ ফেব্রুয়ারী সকাল হতে টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে মাদক কারবারীদের ঐতিহাসিক আত্নসমর্পণ কার্য্যক্রম শুরু হবে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত আতœসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কক্সবাজারের ৪ সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম ও শাহিন আকতার। এছাড়া পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল, বিজিবির রিজেন্ট কমান্ডার জেনারেল সাজেদুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, ডিজিএফআইয়ের কর্নেল জিএস ইমরান ইবনে রূপসহ পুলিশ ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

আতœসমর্পণে প্রস্তুত থাকা ১শ ২০জন ইয়াবা কারবারীরা আজ শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। এসব ইয়াবা কারবারীরা হচ্ছে সাবেক এমপি বদি পরিবারের আবদু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান, ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু ও সাহেদ কামাল। টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র দিদার মিয়া, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই পুত্র আবদুর রহমান, জিয়াউর রহমান, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ,

এছাড়া সাবরাং ইউনিয়নের মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ দানু মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, সামশু মেম্বার, নুরুল আমিন, আলী আহমদ, মৌলভী বশির, হোসেন আহমদ, শওকত আলম, রাসেল, ডেইল পাড়ার নুরুল আমিন, মুন্ডার ডেইলয়ের মনজুর, আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, আবদুল হামিদ, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নূর মোহাম্মদ, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, ডেইল পাড়ার মোঃ সাকের মিয়া, নয়াপাড়ার মোঃ তৈয়ব,

টেকনাফ পৌর এলাকা ও সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, বড় হাবিব পাড়ার ছিদ্দিক, পুরনো পল্লান পাড়ার শাহ আলম, অলিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভী পাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরী পাড়ার মংমং ছেং প্রকাশ মমচি ও দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার জুবাইর হোসেন, মধ্যম জালিয়া পাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইল পাড়ার আবদুল আমিন, নাজির পাড়ার এনামুল হক মেম্বার, ভুট্টোর ভাগিনা আফসার, আবদুর রহমান, সৈয়দ হোসেন, মোঃ রফিক, মোঃ হেলাল, জামাল হোসেন, মৌলভী পাড়ার মোঃ আলী, নাইটং পাড়ার মোঃ ইউনুস, উত্তর লম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিম মাঝি, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, রাজার ছড়ার আবদুল কুদ্দুস, জাহালিয়া পাড়ার মোঃ সিরাজ, নতুন পল্লান পাড়ার মোঃ সেলিম, নাইট্যং পাড়ার মোঃ রহিম উল্লাহ, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়ার ঘোনার দিল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হাছন, রাজার ছড়ার হোসেন আলী, উত্তর জালিয়া পাড়ার নুরুল বশর মিজি, আবদুল গনি, জালিয়া পাড়ার মোঃ হাশেম, পুরান পল্লান পাড়ার ইসমাইল, নাইট্যং পাড়ার আইয়ুব, হাবিব, মাঠ পাড়ার কামাল, শীলবনিয়া পাড়ার আইয়ুব, জালিয়া পাড়ার আলম, নুরুল আলম,

বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজ পুরার নুরুল আলম, শামলাপুর জুমপাড়ার শফি উল্লাহ, ছৈয়দ আলম, উত্তর শীলখালীর মোঃ আবু ছৈয়দ,

হ্নীলা ইউনিয়নের হ্নীলা পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, আলী খালীর জামাল মেম্বার, শাহ আজম, পশ্চিম সিকদার পাড়ার ছৈয়দ আহমদ, রশিদ আহমদ, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, জাদিমোরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, লেদার ফরিদ আলম, মোঃ হোছন, জহুর আলম, আবু তাহের, বোরহান, হামিদ, রবিউল আলম, আলীখালীর হারুন, হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার মাহাবুব, বাজার পাড়ার মোঃ শাহ, পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, আলী নেওয়াজ, আবু তৈয়ব ও রমজান প্রমুখ। সেফহোমে থাকা মাদক কারবারী ছাড়া অনেক মাদক কারবারী আত্বসর্মপণে যোগ দেওয়ার জন্য ছুটছে। অনেকে এই আত্বসমর্পণ পরবর্তী কার্য্যক্রম পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

টেকনাফ পৌর এলাকার প্রথম সারির বেশ ক’জন তালিকাভূক্ত মোস্ট ওয়ান্টেট, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আলোচিত ইয়াবা কারবারীরা এই প্রক্রিয়ায় না আসায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,আত্নসমর্পণকারীদের সাজা শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করা হবে। আর যেসব মাদক কারবারী এই আহবানে সাড়া দিবেনা, তাদের বিরুদ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মাধ্যমে কঠোর পরিণতির সম্মুখীন করে হলেও দেশকে মাদকমুক্ত করা হবে।

স্থানীয় সাধারণ সচেতন মহল মনে করেন, মাদকমুক্ত দেশ গঠনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে মুখোশধারী ভিআইপি, সিআইপি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী, সোর্স ও মিডিয়া কর্মীর আড়ালে থাকা মাদক কারবারীদের দ্রু আইনের আওতায় আনা দরকার।

এদিকে আত্মসমর্পণ করতে পুলিশ হেফাজতে থাকা ইয়াবা কারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো ৪৫০ জন ইয়াবা কারবারির তালিকা প্রস্তুত করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। তারা পলাতক।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানান, ‘নতুন করে তৈরি করা ৪৫০ জন ইয়াবা কারবারির তালিকায় অন্তত ৩০ জন শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার রয়েছে, যারা বাইরে থাকলে সীমান্তে ইয়াবা পাচার রোধ করা অসম্ভব।’ তিনি জানান, এই ৩০ জন ছাড়া বাকিদের অনেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি কাউকে কাউকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তবে সবাইকে পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য টেকনাফ সীমান্তে কয়েক মাস ধরে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বিভিন্নভাবে মারা গেছেন ৪৪ জন। এর মধ্যে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।