বাকী শুধু সেন্টমার্টিন

টেকনাফ-উখিয়ার ১০ ইউনিয়নেই ছড়িয়েছে রোহিঙ্গা

শিবির ছাড়িয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নেও অবস্থান করছে। গত বছর মার্চের দিকে শুরুতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন-ইউএনএইচসিআর এর দেওয়া হিসেবে শিবিরবহির্ভূত রোহিঙ্গারা সীমিত ছিল কেবলই টেকনাফের শামলাপুর, নয়াপাড়া, লেদা ও জাদিমুড়া এলাকায়

শিবির ছাড়িয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নেও অবস্থান করছে। গত বছর মার্চের দিকে শুরুতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন-ইউএনএইচসিআর এর দেওয়া হিসেবে শিবিরবহির্ভূত রোহিঙ্গারা সীমিত ছিল কেবলই টেকনাফের শামলাপুর, নয়াপাড়া, লেদা ও জাদিমুড়া এলাকায়।

বর্তমান হিসেবে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ার ১১ ইউনিয়নের ১০টিতেই ছড়িয়ে পড়েছে।
৯ জানুয়ারি, ২০১৯ আইসিএসজি প্রকাশিত প্রতিবেদনের সর্বশেষ জরিপ মতে হোস্ট কমিউনিটি তথা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যাটি হচ্ছে ৬ হাজার ৮ শ ২৭। পৃথক একটি ডাটাসেটে মিলেছে ছড়িয়ে পড়া এই রোহিঙ্গারা কোন কোন এলাকায় বর্তমানে অবস্থান করছে তার উপজেলা ও ইউনিয়নওয়ারি হিসেব। দেখা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১১ ইউনিয়নের ১০টিতেই রোহিঙ্গারা হোস্ট কমিউনিটিতে অবস্থান করছে।

সংখ্যার বিচারে টেকনাফ উপজেলার পরিস্থিতি বেশি উদ্বেগজনক। হ্নিলা ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদেও ১২৮ পরিবার (সদস্য ), সাবরাং এ ৪৯৭ পরিবার (সদস্য ১৯৩৬ ), টেকনাফ পৌরসভায় ১২২ পরিবার (সদস্য ৫৪৯), হোয়াইকংয়ে ১১৬ পরিবার (সদস্য ৫১৪), টেকনাফ ইউনিয়নে ১৭০ পরিবার (সদস্য ৬৯০) ও বাহারছড়ায় ১৫ পরিবার (সদস্য ৬৫) স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বসবাস করছে। উপজেলার একমাত্র ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি নেই তা হচ্ছে সেন্ট মার্টিনস।

উখিয়া উপজেলার হিসেবে দেখা যায়, ৫ ইউনিয়নের সবকটিতেই রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি রয়েছে। হলদিয়া পালংয়ে রোহিঙ্গাদের ৩৬ পরিবার (সদস্য ১৫৮), জালিয়া পালংয়ে ২২৬ পরিবার (সদস্য ৯৮২), পালং খালিতে ১১৫ পরিবার (সদস্য ৫১৩ ), রাজা পালংয়ে ১৬১ পরিবার (সদস্য ৬৯৭ ) ও রত্না পালংয়ে ২৭ পরিবার (সদস্য ১৩৬) বাংলাদেশি পরিবারগুলোর সঙ্গেই অবস্থান করছে।

ড রিফিউজি-রিলিফ রিপ্যাটরিয়েশন কমিশন-আরআরআরসি ও ইউএনএইচসিআর তাদের জরিপ ‘লোকেশন অফ রোহিঙ্গা রিফিউজির ইন কক্সবাজার’ এ ওপরের এই উপাত্ত দিয়ে বলেছে, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত তথ্য তাদের প্র্রতিবেদনে এসেছে।

ক্যাম্পে লাখ লাখ রোহিঙ্গা, বাইরেও হাজার হাজার- স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের উত্তর বেরিয়ে এসেছে রোহিঙ্গাদেও নিয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর পরিচালিত জরিপে।

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য গঠিত ইন্টারসার্ভিস কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ আইসিএসজি চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ করেছে ‘মাল্টি সেক্টরাল নীডস এসেসমেন্ট ইন হোস্ট কমিউনিটিজ- প্রিলিমিনারি ফাইনডিংস’ শিরোনামের একটি বিশদ প্রকাশনা। রোহিঙ্গাদের এই অনিবার্য উপস্থিতি কক্সাবাজারের ব্যাপক সংখ্যক বাসিন্দার নিরাপত্তা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের কী কী প্রয়োজন এসব চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জরিপ চালিয়ে তারা বোঝার চেষ্টা করেছে রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোভাবও। রোহিঙ্গারা যেহেতু একা আসেনি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা নিয়ে এসেছে নানা সমস্যাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই যে তাদেও সর্বান্তকরণে মেনে নেয়নি তা যথার্থভাবেই ধরা পড়েছে প্রতিবেদনে।

জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের একজনও বলেনি তারা রোহিঙ্গাদের খুব বেশি পছন্দ করে। উখিয়ার ২০ শতাংশ বাসিন্দ বলেছে, রোহিঙ্গাদের কারণে তারা খুবই অসুখী। টেকনাফে এ হার ১৪ শতাংশ। রোহিঙ্গাদের কারণে অসুখী- এ জবাব দিয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ এই দুই উপজেলারই ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা। রোহিঙ্গাদের পেয়ে হ্যাপি তথা সুখি- এ উত্তর দিয়েছে উখিয়ার ১২ ও টেকনাফের ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা। সুখী বা অসুখী কোনটাই নয়- এমন উত্তরদাতা এসেছে উখিয়ায় ৩৮ এবং টেকনাফে ৪০ শতাংশ।

গত বছর ভয়াল ডিপথেরিয়া যখন ছড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা শিবিরে, বাদ যায়নি আশপাশের বাংলাদেশিরাও। গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন মতে, স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ২০২ ডিপথেরিয়া কেইস-পেশেন্ট পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ৩০ জনের মধ্যে নিশ্চিতভাবে পিসিআর পাওয়া যায়। ৬৩ জনের ক্ষেত্রে বলা হয় মোটামুটিভাবে নিশ্চিত যে তাদের ডিপথেরিয়া হয়েছে। ১০৯ জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। ডিপথেরিয়ায় বেশ কিছু রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটলেও স্থানীয় কোনো রোগীর এতে প্রাণহানী হয়নি বলে জানানো হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটিতে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ত্রাণ সংস্থাগুলোর শেষ হিসেবটি এরকম: ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টেও পর মোট রোহিঙ্গা এসেছে ৯ লাখ, ৯ হাজার ২০৭। কুতুপালঙ ও বালুখালি বর্ধিত শিবিরে রয়েছে ৬ লাখ, ২৮ হাজার ৫৪৬ জন। অন্যান্য শিবিরে রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩৪ রোহিঙ্গা। এর বাইরে ৬ হাজার ৮২৭ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে তাদের ভাষায় হোস্ট কমিউনিটি তথা কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি সমাজের সঙ্গে।

/কালেরকন্ঠ