রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার আহ্বান চীনের: ফিরলেই প্রত্যেক পাবে ৫ লাখ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট – দেশে ফিরে যেতে রাজি হলে চীনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার ( বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ লাখ) পর্যন্ত অর্থ-সহয়তার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীন সরকারের এশিয়া বিষয়ক দূত সুন গোজিয়াং। ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম বেনার নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বৈঠক করে তাদের এখনই মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান সুন গোজিয়াং। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রবিবার (৩ মার্চ) ২৯ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে রোহিঙ্গারা তার এই অর্থ-সহয়তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রোহিঙ্গারা বলেছেন, রোহিঙ্গা হিসাবে নাগরিকত্ব না দিলে এবং প্রত্যাবাসনের আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে তারা রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি নন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক ডেস্কের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বেনার নিউজকে বলেন, “চীনা সরকারের প্রতিনিধির সাথে রোহিঙ্গাদের সভা সম্পর্কে আমরা অবগত। আমরাই সভাটি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”
চীন সরকারের বিশেষ দূত সুন গোজিয়াং সভায় চীনের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করেছেন।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক ডেস্কের আরেক কর্মকর্তা আলাউদ্দীন ভূঁইয়া বেনার নিউজকে জানান, সুনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের চীনা প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন চীনের মিয়ানমার দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা এবং ঢাকা দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।
“প্রতিনিধিদলটি ২ মার্চ রাতে ঢাকায় আসে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা ও অন্যান্যদের সাথে সভা করে মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করে,” বলেন তিনি।
এই বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চীনের ঢাকাস্থ দূতাবাসে ই-মেইল পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানায় বেনার নিউজ। তবে বেনারনিউজের কাছে সভার একটি ভিডিও রয়েছে। ভিডিওতে চীনা প্রতিনিধিদলটিকে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায় বলে বেনারনিউজের দাবি।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ব্যানারে তারা এ বৈঠকে অংশ নেয়। সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন, “চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পের ২৯জন নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলাম।”
তিনি বলেন, “শুরুতেই তারা আমাদের কাছে জানতে চান, আমরা সবাই নতুন রোহিঙ্গা কিনা এবং আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী কিনা। আমরা বলেছি, আমরা এখনই চলে যেতে রাজি, যদি আমাদের সব দাবি পূরণ করা হয়। অন্যথায় যেতে রাজি নই।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত

এ বিষয়ে চীনে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষা দিচ্ছে চীন। কিন্তু মিয়ানমার যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে তাতে চীন হয়তো ভবিষ্যতে মিয়ানমারকে আর আন্তর্জাতিক চাপ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।”
“সে কারণে চীন সরকার তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে চাইছে,” বলেন তিনি।

চীন রাখাইনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে এই কূটনীতিক বলেন, “যদি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে তারা তাদের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে পারবে না।”
তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের বের করে দেয়ার পর রাখাইনের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষরাও ভালো নেই। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চীনকে রাখাইনে তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের ধারণা, চীন রাখাইন ইস্যুতে সমঝোতার কথা বললেও কখনোই মিয়ানমারকে চাপ দেবে না। কারণ বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের সাথে চীনের স্বার্থটা অনেক বেশি।

“এটা নিশ্চয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনকে আমরা এখনও পক্ষে আনতে পারিনি,” বলেন এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনও বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন অবধি চীন তাদের মূল অবস্থানটা পরিবর্তন করছে না। কারণ তারা মনে করছে যে, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হলে সেখানে চীনের যে বিশাল স্বার্থ আছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”