রোহিঙ্গা মাঝি প্রথা বাতিলের দাবি

মাহাবুবুর রহমান :


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝিদের দাপটে তটস্থ সাধারণ রোহিঙ্গা সহ ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মচারীরা। আগে মাঝিরা এনজিওতে কর্মরতদের সাথে ভাল ব্যবহার করলেও সম্প্রতি  খারাপ ব্যবহার করছে। বিশেষ  কাছে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত নারী কর্মচারীদের সাথে খুবই বাজে ব্যবহার করছে, অনেক সময় তারা ক্যাম্প ইনচার্জ এর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেও হয়রানি করে। এছাড়া মাঝিরা ত্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় তাদের কর্তৃত্ব জাহির করতে চাইছে। একই সাথে ত্রাণের মালামাল বিক্রি থেকে শুরু করে ক্যাম্পে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে গেলে সেখানেও তারা দেখভালের নামে বাড়তি টাকা দাবী করছে। এছাড়া নিজেদের অধিকারের কথা বলে রোহিঙ্গা মাঝিরা সর্বক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের দাবী ক্যাম্পে মাঝিপ্রথা বাদ না দিলে ভবিষ্যতে এই মাঝিরা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়বে।
উখিয়ার ক্যাম্প ই-১ এর রোহিঙ্গা মনুজর মিয়া বলেন, এখানে আমরা মাঝিদের কারণে অনেক সমস্যায় আছি। যাদের মাঝি বানানো হয়েছে তারা এখন ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। মাঝিদের কাজ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সাথে মিলেমিশে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধা ভাল ভাবে পৌছে দেওয়া কিন্তু এখন তারা ক্ষমতা দেখাতে চায়। সে জন্য অনেকে মাঝিদের আলাদাভাবে খুশি রাখতে ব্যস্ত থাকে বলে জানান তিনি। মাঝিরা চাইলে এক ঘরে সপ্তাহে ২ বার ত্রাণ পাচ্ছে, আবার ঘরে সদস্য সংখ্যার বেশি ত্রাণ পাচ্ছে, সেখান থেকে তারা বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার বাড়িঘর থেকে ত্রাণের মালামাল সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে বাইরে বিক্রি করা পর্যন্ত সবখানে তাদের কমিশন দিতে হয়।
ক্যাম্প ১৮ এর রোহিঙ্গা আলী আহামদ বলেন, এখানে বিয়ে করাতে মাঝিদের টাকা দিতে হয়। এমনকি কোন মেহমান আসলে তাদের খবর দিতে হয়, এটা ভাল কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা কিছু অনৈতিক আবদার করে। বাংলাদেশ সরকার তাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটার চেয়ে তারা অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করে। তাদের কথা মত কাজ না করলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে। শুরুর দিকে এই সমস্যা ছিল না কিন্তু এখন মাঝিদের অত্যাচারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক মাঝি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অসংখ্য বিয়েও করেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আশেক বলেন, ১ বছর আগেও রোহিঙ্গারা আমাদের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করতো। আমরা যা বলি সেটাই তারা শুনতো। নিয়ম মেনে চলতো কিন্তু এখন তারা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। তারা আমাদের কথা শুনতে চায়না উল্টো আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। বিশেষ করে ক্যাম্প মাঝিরা বেশি বেপরোয়া। প্রত্যেকটি কাজে তারা নাকগলায়। স্বাস্থ্য সেবা নিতে লাইনে দাড়ালে সেখানে মাঝিরা এসে ঝামেলা করে। মূলত মাঝিরা এখন ত্রাণের মালামাল বিক্রি সিন্ডিকেট করে বেশি টাকা আয় করছে। সে জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে গেছে। আর আমাদের ক্যাম্প ইন্চার্জ এবং পুলিশরা তাদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এ জন্য এই অবস্থা। আমি নিজে স্বাক্ষি আমাদের এক নারী সহকর্মীর নামে মাঝি মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে সেটা আমলে নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জ সেই নারী সহকর্মীকে রোহিঙ্গাদের সামনে বকা দিয়েছে এতে সে অঝোরে কেঁদেছে আর রোহিঙ্গারা হেসেছে।
উখিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাঝি প্রথাটাই সরকারের একটি ভুল সিন্ধান্ত। এটা পক্ষান্তরে রোঙ্গিাদের মাঝে নেতৃত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আর ইতিমধ্যে মাঝিদের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২০ জনের মত নিহত এবং বহু হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই মনে করি রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে মাঝি প্রথাটাই তুলে দেওয়া দরকার। এসব স্থানে প্রশাসন বা স্থানীয় জনগোষ্টিকে ব্যবহার করতে হবে।
একই মত দিয়ে উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামদ বলেন, রোহিঙ্গাদের মাঝি হিসাবে দেওয়ার পরেই ক্যাম্পে সমস্যা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের অবজ্ঞা করা শুরু করেছে। এছাড়া অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের চাকরি দিয়েছে ফলে তারা স্থানীয় ছেলে মেয়েদের সাথে চরম ভাবে খারাপ ব্যবহার করছে। তাই আমি মনে করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝি পদ থেকে সবাইকে বের করে দেওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা মাঝিরা কথা শুনতে চাইবে না এটা অনেকটা স্বাভাবিক কারণ।  এক বছর আগে সেটা ছিল ভিন্ন রকমের। আর আমরা শুনছি কিছু রোহিঙ্গা মাঝি একটু ঘাটতেড়ামি করছে বা কথা শুনতে চাইছে না। সে সব মাঝিদের বিষয়ে ইতিমধ্যে ক্যাম্প ইনচার্জ সহ থানায় জানানো হয়েছে। তবে কোন রোহিঙ্গা বেপরোয়া হওয়ার কোন সুযোগ নাই তাদের সার্বক্ষনিক নিয়ন্ত্রনে রাখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা মাঝিদের বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। আর বিষয়টি আলোচনা স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে