লক’ জাতীয় পরিচয়পত্র‌, আনলক করতে করণীয়

ডেস্ক রিপোর্ট – লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) পরিবর্তে বর্তমানে নাগরিকের হাতে তুলে দেওয়া  হচ্ছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্মার্টকার্ড। এরই মাঝে ইচ্ছা বা অজ্ঞতায় যারা একের অধিকবার ভোটার হয়েছেন, এমন নাগরিকেরা পড়ছেন বিপাকে। কারণ যারা একের অধিকবার ভোটার হয়েছেন তাদের এনআইডি লক করে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি সূত্র জানায়, এনআইডি লক করা হলে সেই এনআইডি নম্বর দিয়ে কোনো কাজ করা যাবে। কারণ লক এনআইডি নম্বর দিয়ে কেউ তার তথ্য যাচাই করতে গেলে তা পারবেন না। এছাড়া অনেক দ্বৈত ভোটারের বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, অনেকেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইলের সিমকার্ড কিনতে গিয়ে বা কোথাও চাকরি করতে গিয়ে দেখছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার এনআইডি ব্যবহার করে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না। সেখানে এনআইডি ব্লক করা উল্লেখ করা। যারা এনআইডি লক সংক্রান্ত এমন সমস্যায় পড়েছেন। কিভাবে লক এনআইডি আনলক করবেন তার খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়েও আসছেন ভূক্তভোগিরা।

এমন একজন ভুক্তভোগি কুষ্টিয়ার শাহ আলম (ছদ্মনাম)। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমার স্ত্রী ভুলে দুইবার ভোটার হয়েছেন। যার কারণে তার এনআইডি লক করা হয়েছে। কিভাবে এটি ফের চালু করা যায় তার খোঁজ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এসেছিলাম। এখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে যে এর জন্য একটি আবেদন করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র কি কারণে লক করা হয় এবং লক করা হলে করণীয় কি সে বিষয়ে কথা হয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আখতারের সঙ্গে।

এ বিষয়ে তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আপনি ঢাকায় ভোটার হলেন, আবার কোনো কারণে তথ্য পরিবর্তন বা অন্য কোথাও ভোটার হলেন। কিন্তু দুবারই কিন্ত আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে। এই দুটো ফিঙ্গার প্রিন্ট যখনই ম্যাচ করবে। কেউ নতুন ভোটার হতে গেলে, সে আগেই ভোটার হয়েছেন কিনা এটা সার্ভারে চেক করা হয়। চেক করে তখন যদি ম্যাচিংয়ে পেয়ে যায়। তখন সেটা দ্বৈত ভোটার হিসেবে স্ট্যাটাসটা পড়ে যায় এবং ওই ভোটারের এনআইডি নম্বরটা লক হয়ে যায়।

এনআইডি লক কি শুধু দ্বৈত ভোটার হওয়ার কারণেই হয়? নাকি অন্য কোনো কারণেও হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্বৈত ভোটার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। আর  কেউ অভিযোগ করলে বা অন্য কারণে হলে- সেটি কমিশনে এপ্রুভাল হয়ে আমাদেরকে বলে যে এটি লক করে দাও। তবে টেকনিক্যালি হচ্ছে যদি দুই জায়গায় ভোটার হয়েছে এমন ম্যাচিং পায়, তাহলে মেশিনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটিকে দ্বৈত ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করে লক করে দেবে।

কারো এনআইডি লক হয়ে গেলে সেটি ফের চালু করার উপায় কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনআইডি লক হয়ে গেলে তিনি একটি আবেদন করবেন। নরমালি আবেদনটা করতে হচ্ছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বরাবর অথবা সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসের যে রেজিস্ট্রেশন অফিসার (উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার) আছেন তার বরাবর। আবেদনে বলবেন যে, তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে দুইবার ভোটার হয়েছেন। তার একটা আনলক করে আরেকটি লক করে রাখার জন্য।

আর এক্ষেত্রে আমাদের কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমটা আনলক করে দেবো এবং পরেরটা লক-ই থাকবে। প্রথম যেখানে বা যেসব তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন সেটা আনলক করে দেওয়া হবে। কোনো মতেই পরেরটা আনলক করে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, অনেকে ইচ্ছা করে একাধিক স্থানে ভোটার হয়।  একবার ভোটার হয়েছে কিন্তু এনআইডি পায়নি, পরে এনআইডি পাওয়ার জন্য আবার ভোটার হয়। তারা ভাবেন আবার ভোটার হলে এনআইডি পাওয়া যাবে। এই অজ্ঞতার কারণেই মানুষ দ্বৈত ভোটার হয় বেশি। তখন তাদের দুটোই লক হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, অনেকে দুষ্টমি করেও হয়। যেভাবেই দুইবার ভোটার হোক তাদের এনআইডি অটো লক হয়ে যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ভোটার কার্ড না পেয়ে আরেকবার ভোটার হন। অজ্ঞতার কারণে তারা মনে করে যে, আমি এবার কার্ড পেলাম না। আরেকবার ভোটার হলে নিশ্চয়ই কার্ড পাবো। এটা জাস্ট অজ্ঞতা, কারণ দ্বিতীয়বার যখন সে ভোটার হতে যায়, তখনই ম্যাচিং করতে গিয়ে ডেটাবেইজ থেকে তাকে লক করে দেওয়া হয়। তারপর সে আবেদন করলে সেটি আনলক করা হয়।

যারা দুষ্টু প্রকৃতির তারা মনে করে যে এক রকম তথ্য দিয়ে একবার ভোটার হলাম, পরে আবার বাবা বা মায়ের নাম পরিবর্তন বা বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে নতুন তথ্য দিয়ে ভোটার হবো। কিন্তু আসলে তা হবে না। নতুন ভোটার রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সেটি তো বায়োমেট্রিকে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে করতে হবে। দ্বিতীয়বার ফিঙ্গার প্রিন্ট যখনই কেউ দেবেন। তখনই তিনি ধরা খাবেন। দ্বিতীয়বার রেজিস্ট্রেশন করলেই তার এনআইডি লক হয়ে যাবে যোগ করেন তিনি।

ফারজানা আখতার বলেন, কোনো ভোটার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা কোনো ঝামেলা করার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে যদি কিছু করতে চায় এবং কমিশন যদি সেটা বোঝেন। তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত করে যদি বের হয় যে, তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে। তখন ফাইলটা একদম কমিশন পর্যন্ত ওঠে। তখন কমিশন বলে যে, এটা যেহেতু প্রমাণ হইছে এটা লক করে রাখা হোক।

দ্বৈত ভোটারদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, দ্বৈত ভোটারের ক্ষেত্রে আমাদের আইনেই মামলা করার কথা বলা আছে। আইনে বলা আছে মামলা করতে হবে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় ইসি জানায়, তখন একের অধিক জায়গায় ভোটার হয়েছেন এমন ২ লাখ ৪ হাজার ৮৩১ জন নাগরিককে শনাক্ত করা হয়েছে। তখন দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন।