কক্সবাজারে লকডাউনের দোহাই দিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি

মাহাবুবুর রহমান •

টানা কয়েক দিন লকডাউনের প্রভাবে জেলা শহর সহ সর্বত্র দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। শাক সবজি থেকে শুরু করে তরিতরকারী, মাছ মাংস, মসলা সহ সব কিছুর বাড়তি দাম রাখছে দোকানিরা। কোন প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই ক্রেতাদের। দোকানদারের এক কথা গাড়ি ভাড়া বেশি জিনিস পত্র পাচ্ছেন সেটাই অনেক বেশি।

তবে ভিন্ন চিত্র মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের বক্তব্যে। তাদের দাবী লকডাউনের কথা বলে উল্টো আগের দামের চেয়ে কয়েক গুণ কম দামে সবজি সহ তরিতরকারী নিয়ে যাচ্ছে পাইকারী ক্রেতারা।

কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার জসিম উদ্দিন জানান, লকডাউনে আয়রোজগার নাই বললেই চলে সোমবার স্থানীয় বৌবাজারে কলমি শাঁক কিনেছি ১৫ টাকা দিয়ে অথবা দুই দিন আগেও সেই শাঁক বিক্রি করেছে ৫ টাকা বা সর্বোচ্চ ১০ টাকা দিয়ে। এছাড়া প্রত্যেকটা তরিতরকারি দ্বিগুন দামে বিক্রি করছে। এগুলো বলার কেউ নেই, দেখারও কেই নেই। মাঝখানে আমরা নিম্নবিত্তরা মরে যাচ্ছি।

একই এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা দিনমজুর মানুষ সারাদিন কাজ করে অল্প টাকা পাই সেই টাকা বাজারেই চলে যায়। আগে যে মাছ ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো সেই মাছ এখন ২০০ টাকার কমে দিচ্ছে না। এছাড়া প্রতিটি মসলার দামও অনেক বাড়তি। দোকানদারদের কাছে বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, দেশে লকডাউন চলছে খবর নাই। সব কিছু অনেক টাকা খরচ করে কিনতে হচ্ছে এছাড়া গাড়ি ভাড়া যাচ্ছে কয়েকগুণ বেশি তাই জিনিস পত্রের দাম বাড়তি দিতে হবে।

টেকপাড়া এলাকার আরিফ হোসেন বলেন, আমি সেলসম্যান হিসাবে চাকরী করি। লকডাউনে সব কাজ বন্ধ তবে সীমিত আকারে আমাদের চাকরী চলছে এর মধ্যে কোম্পানী নানান অজুহাতে বেতন কেটে নেয়। তবে বর্তমানে বাজারে গেলে হুস হারিয়ে ফেলি, ভাল মাছ মাংস খাওয়ার মত সামর্থ আমাদের নেই তবে আগে যা খেতাম এখন তাই খেতে পারছিনা। গতকাল বাধ্য হয়ে ডাল, আর আলু কিনে নিয়ে গেছি। আমার মতে সরকারের উচিত চালের দামটা কমিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। মানুষ যে কি পরিমান কষ্টে আছে সেটা বুঝা উচিত।

এদিকে বাহারছড়া বাজারে গিয়ে কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখানে কিছু তাজা মাছ উঠে কিন্তু প্রত্যেকটা মাছের দাম আগের চেয়ে প্রায় ১৫০ টাকা বেশী বলছে। এতে ইচ্ছা থাকলেও কিনতে পারছিনা। অথবা চাহিদার চেয়ে কম কিনতে হচ্ছে। এছাড়া সামনে কোরবানীর ঈদ আসছে তাই মরিচ, ধনিয়া, হলুদ, গরম মসলা সহ সবকিছুর দাম আগের চেয়ে অনেক বাড়তি বলছে দোকানদাররা। কিন্তু না কিনেও উপায় নাই। কারণ এসব কিছু প্রয়োজন। এদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা তাদের দাবী লকডাউনের কথা বলে আগের চেয়ে কম মূলেও জিনিস পত্র কিনছে পাইকারী ক্রেতারা।

এ ব্যাপারে রামুর গর্জনিয়া এলাকার কৃষক আবদুল্লাহ জানান, আমি গতকাল ২ মন শুকনা মরিচ বিক্রি করেছি ১৪০ টাকা দরে। সেই মরিচ আগে বিক্রি করতাম ১৮০ টাকায়। কিন্তু এখন বাজার বসছেনা ক্রেতা নাই বলে পাইকারী ক্রেতারা নিতে চাইছেনা। তাছাড়া এত মরিচ থেকে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে তাই কমদামে বিক্রি করে দিয়েছি।

খুরুশকুল ডেইলপাড়া এলাকার আবুল হোসেন বলেন, আমার নিজের উৎপাদিত কলমি শাঁক, পালংশাঁক, কলাশাঁক বিক্রি করেছি পানির দামে। আমাদের কাছ থেকে যে শাঁক তারা ৫ টাকায় কিনে নেয় সেই শাঁক তারা বাজারে ২০ টাকার কমে বিক্রি করে না। এছাড়া কাকরল বিক্রি করেছি কেজীতে ১২ টাকা কিন্তু তারা বাজারে বিক্রি করে ৩০ টাকা। তবে ভিন্ন যুক্তি দিচ্ছে বাজারের ব্যবসায়িরা তাদের দাবী লকডাইনের ফলে গাড়ী ভাড়া এখন ৩ গুণ দিতে হচ্ছে এছাড়া ক্রেতাও কম অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে ফেলে দিতে হয়। তাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।