সৈয়দ আশরাফের শূন্য আসন নিয়ে জটিলতা

ডেস্ক রিপোর্ট – একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী বিগত সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ গ্রহণের আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর ফলে ‘শূন্য’ এই আসনটিতে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘সংসদ সচিবালয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের পর ইসিকে জানালে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আর সংসদ সচিবালয় বলছে, ‘যেহেতু নির্বাচন কমিশন জেনেছে যে সৈয়দ আশরাফ মারা গেছেন সেহেতু আসনটি হয়তো শূন্য ঘোষণা করবে ইসি।’

সৈয়দ আশরাফের দশম সংসদের সদস্য পদটি চলতি মাসের ২৮ তারিখে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবে। সাংবিধানিক পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েও তিনি জয়লাভ করেন ৩০ ডিসেম্বর। আর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি তার জয়ী হওয়ার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি (এদিন একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়) মৃত্যুর সময় তিনি দশম সংসদের সদস্য ছিলেন। আর একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত ছিলেন। যেহেতু তিনি শপথ গ্রহণ করেননি, তাই একাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হননি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শপথ গ্রহণের আগেই মারা গেছেন। ফলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন পাঠালে আমরা পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করব। যেভাবে অন্যান্য নির্বাচনে ঘোষণা করা হয়, একইভাবে এই আসেন জন্যও তফসিল ঘোষণা করব।’

তবে সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. জাফর আহমদ খান বলছেন, ‘যেহেতু নির্বাচন কমিশন জেনেছে যে সৈয়দ আশরাফ মারা গেছেন সেহেতু আসনটি হয়তো শূন্য ঘোষণা করবে ইসি। কারণ তিনি তো শপথ নেননি। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো পরিষ্কার নয়। আইন মন্ত্রণালয়ে বা নির্বাচন কমিশনে কথা বললে হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, কারা আসলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করবে।’

সংবিধানের ১২৩ (৪) দফা অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে কোনো সদস্য পদ শূন্য হলে পদ শূন্য হওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ইসি সূত্র বলছে, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচিত প্রার্থী সৈয়দ আশরাফ যেহেতু শপথ গ্রহণ করার আগেই মারা গেছেন সেহেতু নতুন করে পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করে শূন্য আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে ইসি। যেহেতু উনি শপথ না নিয়েই মারা গেছেন সেহেতু তাকে তো সংসদ সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। কারণ তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেননি।

তাছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেট প্রকাশের তিন দিনের ভেতরে শপথ গ্রহণ করার কথা। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ শপথ গ্রহণের আগেই মারা গেছেন। এখন সংসদ সচিবালয় থেকে কমিশনের কাছে একটি চিঠি দিয়ে জানাবে যে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ গ্রহণ করতে পারেননি। শপথ গ্রহণের আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ইসিকে জানাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নেবে।

এদিকে সংবিধানে ৬৭ (ক) দফায় বলা হয়েছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে নব্বই (৯০) দিনের মধ্যে তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে অসমর্থ হলে সংশ্লিষ্ট আসন শূন্য হবে। আর নির্বাচন করতে হবে আসন শূন্য হওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, ‘একটা জটিলতা আছে। কিন্তু আইনের স্পিরিট বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে পারে। এক্ষেত্রে তার আসনটি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের মৃত্যুর দিন থেকে শূন্য হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।’

উল্লেখ্য, চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিজয়ী হন। কিন্তু সাংসদ হিসেবে শপথের আগেই গত ৩ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে মারা যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসার পর ৬ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী কবরস্থানে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্যর দাফন সম্পন্ন হয়।