পর্ব: ২

সীমান্তের এপার-ওপার নিয়ন্ত্রণে চার ভাই সিন্ডিকেট

* মাদকসহ চোরাইমাল পাচারে মাফিয়া চক্র
* কিছুতেই থামছে না তাদের অপকর্ম
* প্রত্যেকের রয়েছে একাধিক মামলা,
* প্রশাসনের নজরদারি জরুরী

এম ফেরদৌস, উখিয়া :
সীমান্তে এতো উত্তেজনার পরেও ভাই গ্রুপের অবৈধ পাচার যজ্ঞ থেমে নেই। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে আঁতাত করে বিশাল মাফিয়া সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন তারা চার ভাই।

জানা যায়, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকায় বাড়ি স্থানীয় কলিম উল্লাহ’র তার রয়েছে ৪টি ছেলে।

এদের সবার বড় আবুল খাইর (৩৩), তার ছোট আবু তাহের (৩০) সেজ ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৭) এবং একদম ছোট আবু বক্কর(২৫)। সবার বড় আবুল খায়ের গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে কক্সবাজার বিমান বন্দর পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাভোগ করেন।
এদের মধ্যে আবু তাহের এবং আবু বক্করের বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মামলা গুলো জামিনে থাকায় পুলিশ তাদেরকে আটক করছেনা এমন অভিমত অনেকের। সর্বশেষ আবু বক্কর কারাভোগ করেন এক ধর্ষণ মামলায়।

বর্তমানে তারা বিবাহ করে আলাদা আলাদা হলেও ভাইগ্রুপ সিন্ডিকেট এখনো আলাদা হয়নি। তারা নিরবে চালিয়ে যাচ্ছে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধ চোরাইমাল পাচার যজ্ঞ।

সীমান্ত ঘেষে চিংড়ী ঘেরের ব্যবসার অজুহাত দিয়ে তারা ৪ ভাই এপারের মাল ওপারে, ওপারের মাল এপারে দেওয়া-নেওয়া বিনিময় ঘটাচ্ছে নিয়মিত। মাদকসহ বিভিন্ন চোরাইমাল এপারে আনছে। আবার এপার থেকে বাংলাদেশের তেল,ডালসহ বিভিন্ন নিত্যপন্য ওপারে পাঠাচ্ছে এমন তথ্য ডিসিএন টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

এ অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে, তাদের বহুমুখী অপরাধ দৃশমান রয়েছে। পুরো পালংখালী জুড়ে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ জগতে তারা চার ভাই কোন না কোন ভাবে জড়িত থাকেন। সীমান্তে চিংড়ি ঘের ব্যবসার অজুহাতে এপার-ওপার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তারা।
কলিম উল্লাহ’র ৪ ছেলের প্রত্যেকের মামলা রয়েছে। কারো মাদক মামলা, কারো ধর্ষণ মামলা, কারো মারামারি,হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তারা জর্জরিত । এত মামলা ও কারাভোগ করার পরেও তারা ৪ ভাই বীরদর্পে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। চোরাইমাল পাচারে কোন ভয়ভীতি আমলে নেন না তারা। দিন দিন বেপরোয়া ভাবে সীমান্তে চোরাইমাল পাচার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মূখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। কারণ তাদের টাকার কাছে আইনশৃংখলাবাহিনী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষ অন্ধ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানায়, তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে মিথ্যা মামলা,হামলার শিকার হতে হয়। ফলে কেউ তাদের গোঁমর ফাঁস করতে চাই না।

তিনি আরো জানায়, বর্তমানে মায়ানমারের অভ্যান্তরে আরকান আর্মি ও জান্তা সরকারের সংঘর্ষে সীমান্ত পরিস্থিতি খারাপ হলেও নতুন করে তারা বাংলাদেশ থেকে রাজস্ব ফাঁকি তেল,ডাল,বিভিন্ন নিত্যপন্য জিনিস পাচার করছেন সু-কৌশলে এসব ঘটনা এলাকার সকলেরই জানা। তারা চার ভাই ছাড়াও স্থানীয় কতিপয় ইয়াবা কারবারিরা সীমন্তের কাটাতারের বেড়া ঘেষে দিনের বেলায় অবস্থান নেয়, রাতে মালামাল গুলো নিয়ে মৎস্য ঘের হয়ে আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় ঢুকে। পরে সুযোগ বুঝে স্থানীয় এবং রোহিঙ্গা যুবক দিয়ে ওপারে মালগুলো পৌছে দেয়।

তবে অভিযোগ উঠেছে, তারা চার ভাই সীমান্ত এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন অপরাধ জগতের মাফিয়া হলেও বর্তমানে তারা বহাল তবিয়তে সীমান্তে পাচার ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিন্তু আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানান প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সুত্রে , ২০১৮ সালের ৩১মে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ইয়াবা চালান নিয়ে আসার সময় দেখে ফেলায় তার ভাতিজা জুহুর আলমকে কূপিয়ে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় সে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে মোক্তার আহমদ (৫৬) এবং তার ছেলে মোঃ ইসমাঈল (২৮) সহ ১৫/২০জনকে আসামী করেন। মামলায় অনেকে জামিনে এসে আবারো এসব অবৈধ ব্যবসা শুরু করে দেয় তারা। তাদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে ওই ৪ সহোদর নাম বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে পৌছে গিয়েছিল।

প্রশাসনের একাধিক সুত্র বলছে, মিয়ানমারের কাছাকাছি সীমান্ত উপজেলার হওয়ার কারনে উখিয়া-টেকনাফে এপার-ওপারে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাইপন্য পাচার বন্ধ করা সহজ হচ্ছে না। তবে অনেক পাচারচক্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখনো সময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়বে।

সুত্রমতে,২০১৭ সালে আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে। তাই এই সীমান্তের এপার আর ওপার তাদের কাছে পরিচিত। তাছাড়া মিয়ানমারের এক সময়ের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অন্যন্য পন্য পাচারকারী চিক্কুইন্যার নামের এক ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছিল শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এই ক্যাম্প থেকে সীমান্তের দুরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। যার ফলে তার নেতৃত্বে পালংখালী এলাকার ৪ সহোদরের সিন্ডিকেট আঁতাত করেছিল। সেই থেকে তাদের অবৈধ রাস্তা পরিষ্কার ছিল।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের এক সময়ে যারা ইয়াবা গডফাদার ও বিভিন্ন কালোবাজারি ছিল তারা সকলেই শফিউল্লাহকাটা এবং বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে। তাদের হাত ধরেই অনেক স্থানীয় মানুষ এসব অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়েছে । সীমান্তে এত কড়াকড়ি ও গন্ডোগোলের মধ্যে তাদের মাধ্যমে আঞ্জুমানপাড়া এবং বালুখালী দিয়ে এখনো প্রতিনিয়ত মাদকসহ বিভিন্ন চোরাইপন্য আসা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি থাকবে চোরাইমাল পাচারকারীর মাফিয়াদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হউক।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন জানান, মাদকসহ যাবতীয় অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে। যেখনো অবৈধ চোরাইমাল পাচারে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।