অদম্য মেধাবী কক্সবাজারের টুম্পা এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক •

অদম্য মেধাবী নাসরিন জাহান টুম্পা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেক বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থী তাঁর স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফলাফল অর্জন করেছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক ইতিহাসে একটি বিরল ও অভূতপূর্ব রেকর্ড। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর টুম্পা তাঁর অনন্য সাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড বায়োটে কনোলজি বিভাগ প্রভাষক পদে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছে।

এই সাফল্যের নেপথ্য কারণ হিসেবে টূম্পার সরল সাধারণ স্বীকারোক্তি, অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস ও ধ্রুব লক্ষ্যই তার সাফল্যের মূলমন্ত্র। পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা, পরিবারের অকুন্ঠ সমর্থন ও প্রেরণাকে টুম্পা অনুঘটক বলে মনে করে।

সাদিয়া নাসরিন টুম্পা ঈদগাঁও উপজেলার সদর ঈদগাঁও ইউনিয়নের কলেজগেইট এলাকার মরহুম আব্দুস শুক্কুরের কনিষ্ঠা কন্যা। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে টুম্প সবার ছোট।

প্রয়াত বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। বাবার সেই অমীয় প্রেরণায় বাবার স্বপ্নপূরণ করে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিধিবাম। বাবা মেয়ের সেই সাফল্য দেখে যেতে পারেনি। তাই বলে থেমে থাকেনি টুম্পা। এগিয়ে গেছে স্বপ্ন ছোঁয়ায়।

টুম্পা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন থেকে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে ২০১০ সালে বিজ্ঞানে এসএসসি পাশ করে। ২০১২ সালে গ্লোন্ডেন প্লাস’সহ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে।

সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারেরই জন্ম তার, শৈশব কৈশোরও কেটেছে পরিবারের মধ্যবিত্ত ঘরানার সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে তার প্রয়াত পিতা আবদুস শুক্কুর অন্য পাঁচ ছেলে-মেয়েদেরকে টুম্পার মত সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়তই ভেঙেছেন মধ্য বিত্তের শেকল। স্বাদ আর সাধ্যের মাঝে একেঁছেন যতিচিহ্ন। মুজিব আদর্শবাদী চেতনা আর সাহস টুম্পার পিতাকেও যে কঠিন তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার সনাতনী বাঙালি চরিত্রের ক্রুর দৃষ্টি বিক্ষত করেনি তা নয়। সেই ব্রতই পালন করেছেন আমৃত্যু।

টুম্পার মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আমাদের পরিবার কখনই আদর্শের সাথে আপোষ করেনি, করবেও না। আমাদের বিশ্বাস যেমন ভালোবাসায় পূর্ণ তেমনি বিশ্বাসকে সংহত রাখতে আমরা কখনোই আপোষ করিনি। টুম্পা তাদের প্রতি প্রশ্ন ছূড়ে দিয়ে বলেন, আমার যোগ্যতা, মেধা আর মতাদর্শের চেয়ে কি আমার আশেপাশের মানুষজন বেশী গুরুত্বপূর্ণ? শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সোনার বাংলা গড়ার এই অভিযাত্রায় যুক্ত হওয়ার তীব্র ইচ্ছে আমার এবং আমার পরিবারের।

টুম্পার কৃতিত্বে গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত ঈদগাঁওবাসী। সকল প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা এবং প্রতিহিংসা উতরে টুম্পা এগিয়ে যাক অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়।