অরক্ষিত সীমান্ত; ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পরেও আসছে ইয়াবা

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কিছুতেই থামছেনা মিয়ানমারে উৎপাদিত ইয়াবা পাচার। কারন বাংলাদেশ- মিয়ানমার এই সীমান্ত এলাকাটি যুগের পর যুগ ধরে অরক্ষিত। নেই কোন কাঁটা তারের বেড়া! নেই কোন সীমানা প্রাচীর।

এতে মিয়ানমার সংশ্লিষ্ট চোরাকারবারীরা এই সীমান্ত ব্যবহার করে খুব সহজেই মাদক পাচার চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। এই পথ ব্যবহার চোরাকারবারীরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার থেকে পাচার করে নিয়ে আসছে লক্ষ লক্ষ মরন নেশা ইয়াবা। এই ইয়াবা ব্যবসায় লিপ্ত হয়ে খুব কম সময়ে কেউ কোটিপতি, কেউ হয়েছে সর্বশান্ত, আবার ইয়াবার আগ্রাসনে নানামুখি ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছে অসহায় মানুষ গুলো। কারণ তারা বেশী টাকার লোভে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জড়িত হচ্ছে মাদক পাচারে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাদক পাচার ও বহনকারী হিসাবে যারা জড়িত তাদের মধ্য বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা। তথ্য অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়,ইদানিং সারাদেশে ২০/৩০% যুবক যুবতী মাদক সেবন করছে। এমনকি স্কুল,কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও মাদকের করাল গ্রাস থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। এদিকে সারা দেশের যুব সমাজ যখন মরন নেশা ইয়াবার আগ্রাসনে দিনের পর ধ্বংশের পথে চলে যাচ্ছে।

ঠিক তখনি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী,মাদক পাচার প্রতিরোধ ও কারবারীদের দমন করার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর ভুমিকা হাতে নেয়। এরপর থেকে সারাদেশে শুরু মাদক পাচার ও কারাবারীদের দমন করার জন্য চলমান যুদ্ধ। এই যুদ্ধে এই পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৫ শতাধিক মাদক কারবারী নিহত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলায় দায়িত্বরত পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব সদস্যরা সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা করে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক মাদক পাচারকারী আইন-শৃংখলা বাহিনীর গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে।
নিহত হওয়া ব্যাক্তিরা বেশীর ভাগ টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার।

মাদক বিরোধী চলমান এই অভিযানে সব চেয়ে বেশী প্রশংসনীয় ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে অত্র থানায় কর্মরত সাহসী পুলিশ সদস্যরা।

তাদের সেই সফলতার অংশ হিসাবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী নিজেদের দোষ শিকার করে অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার জন্য মাদক কারবারে জড়িত ও মাদকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া ১০২জন ব্যাক্তি আত্মসমর্পন করে। অপরদিকে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক পাচার প্রতিরোধ ও পাচারে জড়িত চিহ্নিত অপরাধীদের দমন করার জন্য দিনরাত কঠোর ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে সীমান্ত প্রহরী টেকনাফ ২ বিজিবি সৈনিকেরা। পাশাপাশি তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ,সীমান্ত এলাকার নানা অপরাধ কর্মকান্ড ও সন্ত্রাস দমনে পালন করছে কঠোর ভূমিকা। মাদক বিরোধী চলমান যুদ্ধে টেকনাফ ২ বিজিবি সদস্যদের ভুমিকা চোঁখে পড়ার মত।

এব্যাপারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার একাংশের দায়িত্বপালনকারি কর্মকর্তা টেকনাফ ২ বিজিবি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শরিফুল ইসলাম জমাদ্দার অভিমত প্রকাশ করে বলেন, টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

কারণ এই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত নানা কৌশল অবলম্বন করে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে মরন নেশা ইয়াবাসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য। পাশাপাশি রয়েছে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ করার ঝুঁকি।

তিনি আরো বলেন, এতকিছু ঝুঁকি থাকার পরও আমাদের সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সদস্যরা নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার প্রতিরোধ ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে সরকার ঘোষিত ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ চলমান অভিযানে আমাদের বিজিবি সদস্যরা মাদক পাচার প্রতিরোধ ও মাদক কারবারীদের নির্মুল করার জন্য কঠোর ভুমিকা পালন অব্যাহত রেখেছে।

সেই সূত্র ধরে বিজিবি সদস্যদের সাহসী অভিযানে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে মাদক কারবারে জড়িত ১৫ জন অপরাধী গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা। সেই সূত্র ধরে ৩১ মার্চ রবিবার মাদক পাচারে জড়িত এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের সদস্যরা এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের যাতায়াত বা আশ্রয়-প্রশ্রয় বিষয়েও বিজিবি সদস্যরা সজাগ রয়েছে।

এবং টেকনাফ সীমান্তে যেকোন অপরাধ মুলক কর্মকান্ড সংগঠিত হোক না কেন তা আমাদের সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সৈনিকরা কঠোর হস্তে দমন করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। তবে স্থানীয় জনগনের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।