অস্ত্রবাজি ও মাদকসহ গুরুতর অপরাধ রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বে

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া •


মাদক কারবার, স্বর্ণ চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, নারী পাচার, জাল টাকার কারবার, খুন,অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মানব পাচার, ডাকাতি,ধর্ষণ, লাশ গুমসহ এমন কোন গুরুতর অপরাধ নেই যা এখানে ঘটছে না। রোহিঙ্গাদের এরূপ ভয়ংকর আচরণ স্হানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ক্রমশ নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে বলে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়ছে।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল থেকে রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে ব্যাপক আকারে সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা আগমন ঘটে।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পরিষ্কার, এসব রোহিঙ্গা মূলত মাদক কারবার, স্বর্ণ চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, নারী পাচার, খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি,ধর্ষণ কারবারের জন্যই এমন সশস্ত্র পেশা বেছে নিয়েছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডেও অনেক সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জড়িয়ে পড়ছে। এতে তারা এখন দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন,আমরা বারবার সংশ্লিষ্টদের এব্যাপারে সজাগ হতে বলেছি। কিন্তু এ মূহুর্তে প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা, অথবা একস্থানে এতগুলো রোহিঙ্গা না রেখে তাদের বিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থানান্তর করা।

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে ৮ ও ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান বা এপিবিএন পুলিশ। গত দেড় বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর সার্বিক চিত্র উদ্বেগজনক।

৮ এপিবিএন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী গত ১৫ মাস ধরে তারা উখিয়ার ১১ টি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছে। এসময়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ১৭ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা তৈরীর ৩৬৫ গ্রাম কাঁচামাল পাউডার। গাঁজা ১ কেজি, বিদেশী বিয়ার ৯০ ক্যান, দেশীয় মদ ১২ লিটার। একই সময়ে বিদেশি পিস্তল ১ টি, দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ১২ টি, গোলাবারুদ ৪০ রাউন্ড, কার্তুজ ৮ রাউন্ড ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র ১৯১ টি জব্দ করার কথা জানা গেছে।

ঐ সময়ে ৯১ ভরি ১৫ আনা চোরাই স্বর্ণ, ৬৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৭৮০ টাকা, ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ১৮৫ মিয়ানমার কিয়াট, বাংলাদেশী জাল নোট ৮১ হাজার ৫০০। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা। গত মাস পর্যন্ত ৮ এপিবিএন ৭৭৮ টি মামলা করেছে। এরমধ্যে অস্ত্র মামলা ১৩ টি, মাদক মামলা ২২২ টি, ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা ১৬ টি,বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১০ টি উল্লেখ্য।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান পিপিএম সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। ভবিষ্যতেও মাদক, অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী আটক কার্যক্রম জোরদার করে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রধান করেন।

এদিকে ১৪ এপিবিএন গত দুই বছরে উখিয়ার১৫টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে রয়েছে। তারা এসময়ে ১০ লক্ষ পিস ইয়াবা বড়ি, ৮৫০ ক্যান বিদেশি বিয়ার, ৪৮ কেজি গাঁজা, ৩১টি দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪১ রাউন্ড গুলি, ১৯টি কার্তুজ, ৩টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে।

একই সময়ে ১ কেজি ২৫২ গ্রাম স্বর্ণ, ৩৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ১২০ টাকা এবং ৩১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮০০ কিয়াট (মিয়ানমার মুদ্রা) উদ্ধার করেছে। এছাড়াও ১হাজার ৭৯৮ জন রোহিঙ্গা অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তৎমধ্যে ৪২৫ জন মাদক কারবারী, ১১৩ জন অবৈধ অস্ত্রধারী, ২০৯ জন দুষ্কৃতিকারী এবং ১ হাজার ৫১ জনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট গঠন করা হয়েছে।

১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক জানান, ক্যাম্পে হত্যা, অস্ত্রবাজি ও মাদক কারবার জিরো লেভেলে নামিয়ে আনতে কয়েকটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। এসব কাজে সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সহযোগীতা অবশ্যই প্র‍য়োজন।

গত ২৬ মে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয়েছে “বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমম্বয়, ব্যবস্হাপনা ও আইন শৃংখলা সম্পর্কিত ১৭ তম নির্বাহী কমিটির সভা। সভাশেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সভার প্রধান অতিথি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতায় আমরা উদ্বিগ্ন। সেখানে অপরাধ এপিবিএন পুলিশের টহল তৎপরতা আরও বেশি জোরদার করা হবে। প্রয়োজনে মোতায়েন করা হবে বিজিবি ও র্যাব। এরপরও অপরাধ দমনে সমস্যা হলে ক্যাম্পে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কথা জানান তিনি।