আগামী ৬ দিন বাসা থেকে বের হবেন না যে কারণে

অনলাইন ডেস্ক • শীত শুরুর আগের বাতাসে বেড়েছে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা। অতিক্ষুদ্র এসব ধুলার মাত্রার ভিত্তিতে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরের বায়ু ইতোমধ্যে ছুঁয়েছে অস্বাস্থ্যকর থেকে অতিমাত্রার অস্বাস্থ্যকরের পর্যায়। বাতাসের এমন দূষণের কারণে প্রতিবছর এসময় দেখা দেয় শ্বাসকষ্টজনিত রোগ।

মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে যান চলাচল সীমিত থাকায় বায়ুর মানে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার সাথে সাথে আবারো আগের স্থানেই ফিরে যাচ্ছে বায়ুর মান। পুরনো রূপে ফিরে এসেছে বায়ু দূষণ।
রোববার (১৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার আজ থেকে টানা ছয়দিন দেশের বায়ুর মান আরো খারাপ থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।

রোববার থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে আইকিউ এয়ারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ে দেশে বায়ুদূষণের গড় হার বেড়ে হতে পারে ১৫১ থেকে ২০০ পিএম ২.৫, যা ‘আনহেলদি’ ক্যাটাগরির দূষণ।

এই মাত্রার দূষণে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে ভোগা ব্যক্তিরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বৃদ্ধ, শিশু, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে ভোগা ব্যক্তিসহ সবাইকে বাড়ির বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়।

ঢাকা মহানগরীর দূষণের চিত্র তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুর মান ১৩১ পিএম ২.৫, গুলশানের বে’স এডজওয়াটারে ১২০, ঢাকার ইউএস এম্বাসিতে ১১৭, বিটোপিতে ১১১, ওহাব বারিধারায় ১১১ ও বিটোপি গ্রুপে ৫৫।

একই সময়ে সারা দেশের দূষণের চিত্র তুলে ধরে আইকিউ এয়ার বলছে, ঢাকায় বায়ুর মান ১১৬ পিএম ২.৫, সাভারে ১১২, ত্রিশালে ১০২, মানিকগঞ্জে ৮৩, শ্রীপুরে ৮১, কুমিল্লায় ৭২ ও নারায়ণগঞ্জে ৪।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘সবুজ বা স্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে ‘মধ্যম’ বায়ু বলা হয়, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘সর্তকতামূলক’ বায়ু বলা হয়, যেটা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর। একিউআই মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণীতে ফেলা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একিউআই মাত্রার বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণীতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সাবধান না হলে অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এ বছরের শীতে দূষিত বায়ু করোনাভাইরাসকে মৃত্যুর হারের বিবেচনায় আরও মারাত্মক করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
তারা বলছেন, উচ্চ স্তরের বায়ু দূষণের সংস্পর্শ মানুষের শ্বাসযন্ত্র ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয় এবং কারণ হয় নানা ঠাণ্ডাজনিত রোগের, যা তাদের কোভিড-১৯-এর জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছে, যেসব শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি আছে তাদের মারাত্মক করোনা মহামারির বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে বিপজ্জনক সূক্ষ্ম ধুলা ও বস্তুকণা পিএম ২.৫ যদি মাত্র এক মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটি কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। নেদারল্যান্ডসের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দূষণের সংস্পর্শে আসার মাত্রায় সামান্য বৃদ্ধি মৃত্যুর হার ২১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ইতালির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা আরেকটি প্রাথমিক গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কণায় কোভিড-১৯ আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্প্রতি সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাতেও দেখানো হয়েছে যে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে দীর্ঘ মেয়াদে থাকা করোনাভাইরাসে প্রাণহানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।

চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বার বার মাস্ক পরার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাস্কের বিকল্প নেই। আর প্রয়োজন ছাড়া শিশু ও বৃদ্ধদের ঘরের বাইরে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কারণ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তের হার তাদের মধ্যেই বেশি।

স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত সড়কগুলোতে পানি ছিটানো কার্যক্রম বাড়ানো, বাসস্থানের জানালা দরজা খোলা না রাখার প্রতি জোর দিচ্ছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় শীতে আবাসিক এলাকাগুলো যথাসম্ভব নির্মাণ কাজ চালাতে যথাযথ ধুলা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ধুলা প্রতিরোধ করতে হবে।