‘আছে-নাই অবস্থা’ কক্সবাজার জেলা বিএনপির

এম. বেদারুল আলম :

মামলা, সিনিয়র নেতাদের আত্মগোপন, কর্মীদের প্রতি নজর না দেওয়াসহ নানা কারনে সিনিয়র নেতাদের প্রতি আস্থা হারাতে বসেছে তৃনমূলের বিএনপির কর্মীরা। ফলে জেলা বিএনপির অবস্থা অনেকটা লেজেগুবরে। সামনের দিনগুলোতে জেলা বিএনপি আরো নখদন্তহীন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বছরের পর বছর বন্ধ থাকার কারনে উপজেলা ভিত্তিক বিএনপির কার্যালয়গুলো এক এক করে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক সময় নেতাকর্মীদের পদভারে মুখরিত উপজেলার অফিসগুলো যেন এখন মৃত্যুপুরি। অনেক উপজেলায় বছরের পর বছর ভাড়া বাকি থাকার কারনে নিরুপায় হয়ে মালিক বন্ধ করে দোকান ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বসেছে। বাকি পড়ে থাকা অফিস ভাড়ার নিশ্চয়তা ও পাচ্ছেনা অনেক মালিক।

বিএনপির জেলা কার্যালয় ছাড়া রামু, উখিয়া, টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়ায় অবস্থিত অফিসগুলো প্রায় বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। কিছু কিছু ইউনিয়নে বাজার কেন্দ্রিক গড়ে উঠা অস্থায়ী অফিস এখন আর দেখা যায়না। ফলে কক্সবাজারে বিএনপির কার্যক্রম অনেকটা আছে নাই অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পরাজয়ের হ্যাট্্িরকের পর ঘুরে দাড়াতে চেষ্টা চালানো বিএনপির অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে । মামলায় র্জজরিত জেলা বিএনপি কেন্দ্রিয় নির্দেশে দল গুছাতে গিয়ে ও  বিপাকে পড়েছে। সাড়া পাচ্ছেনা অনেক সিনিয়র নেতাকর্মীর। টানা তিন মেয়াদে পরাজয়ের পর জেলা বিএনপির অবস্থা খুবই নাজুক । ফলে বিপাকে পড়েছে মাঠে দল গুছাতে। শহরের শহীদ স্মরণির দলীয় কার্যালয়ে পর্যন্ত দেখা যায়না নেতাদের। চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে যদি বিএনপিকে গুছাতে হয় তাহলে দরকার সাংগঠনিক ভীত যা এ মুহুর্তে জেলা বিএনপির অবস্থাদৃষ্টে আছে বলে মনে হয়না।

জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মোঃ ইউসুফ বদরী,  আমাদের ১৪টি সাংগঠনিক উপজেলার বেশিরভাগ কার্যালয় সচল আছে দাবি করে দলকে গুছানো হচ্ছে এমন কথা ও জানান। কিন্তু মামলায় জর্জরিত জেলা বিএনপি এখনো অনেকটা ছিন্নভিন্ন।

তিনি জানান- গতবছর ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৮৩টি নির্বাচন কেন্দ্রিক মামলা হয়েছে যারমধ্যে ১২ হাজার নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। কারান্তরীণ রয়েছে ৩শতাধিক নেতাকর্মী।  আমরা দলকে গুছাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। তিনি বলেন কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার পৌরসভা ছাড়া অবশিষ্ট সাংগঠনিক উপজেলা পূর্ণগঠন করা হয়েছে । অন্যান্য সব উপজেলা এখনো কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবে চলছে বলে দাবি দপ্তর সম্পাদকের।

সিনিয়র নেতাদের বিপদে কাছে না পাওয়ায় তৃনমূলের সাথে দূরত্ব বাড়ছে নেতাদের সাথে। দলের জন্য মামলায় আসামি হওয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃনমূলের এক বিএনপির নেতা জানান, ৩টি মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার কারনে বাড়ি, ব্যবসা কিছুই দেখতে পারছিনা। ঢাকায় নিজেরা গিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেছি। মামলায় আসামি হওয়া এ কর্মীর দাবি মোবাইল পর্যন্ত রিসিভ করেননা সিনিয়র নেতারা।

মামলার কারনে ছিন্নভিন্ন বিএনপির আগামি নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে জেলার তৃনমূলের নেতাকর্মীদের পাশে না পাওয়ার আশংকা রয়েছে সিনিয়র নেতাদের নির্লিপ্ততার কারনে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি কতটুকু গুছিয়ে মাঠে নামতে পারে তা বলে দেবে সময়।

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও বর্তমান অবস্থা জানার জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরীর কাছে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ওমরা পালনে সৌদি আরবে অবস্থানের কারনে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিনিয়র এক নেতার দাবি- দলের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। মামলার কারনে তৃনমূলের অবস্থা এবং মামলায় গ্রামে গঞ্জের কর্মীরা সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ হলেও পরবর্তীতে বেশিরভাগ নেতাকর্মী জামিনে আছে ফলে দলীয় কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছেনা।

জেলা বিএনপির কার্যক্রম আছে নাই অবস্থা বিরাজ করলেও নেতাদের দাবি কাজ চলছে গুছিয়ে। উপজেলা ভিত্তিক দলীয় কার্যালয় যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেটা মানতে নেতারা নারাজ হলেও গত নির্বাচনের পর গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাদের মাঠে দেখা মিলছেনা। শুধুমাত্র রমজানে ইফতার মাহফিল এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্ম বার্ষিকী ও আংশিক মানববন্ধন চোখে পড়ে যা বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে ক্ষুদ্র কর্মসূচি পালন বলা চলে। মাঠে সঠিক নেতৃত্ব ও দলগুছানোর মত ডায়নামিক নেতার অভাবে কক্সবাজারে বিএনপি যেন আছে-নাই এই অবস্থানে। ফলে তৃনমূলের অবস্থা খুবই শোষনীয় বলে দাবি কর্মীদের।