আর করা সম্ভব হবে না রোহিঙ্গাদের

কালেরকন্ঠ ◑

ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে আগে পাসপোর্ট করতে পারলেও এখন থেকে আর রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট মিলবে না। সম্প্রতি পাসপোর্টের সার্ভারে যুক্ত হয়েছে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেইস। ফলে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠবে তাদের পরিচয়। ফলে তালিকাভুক্ত কোনো রোহিঙ্গাই আর বাংলাদেশের পাসপোর্ট করতে পারবে না।

এদিকে দেশে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর আবেদন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছে নাগরিকরা। কিছু সমস্যা তাদের তথ্যপূরণের ভুলের জন্যও হচ্ছে। আর এসব সমস্যা নিয়ে তারা দ্বারস্থ হচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের দিকে এগোচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক ডাটা নেওয়া শুরু করে সরকার। গত বছরের ১ আগস্ট পর্যন্ত দুই বছরে ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকা করে রোহিঙ্গাদের ডাটাবেইসে সংযুক্ত করা হলেও রহস্যজনক কারণে দীর্ঘদিন এই ডাটাবেইস যুক্ত করা হয়নি পাসপোর্টের সার্ভারে। ফলে রোহিঙ্গারা ভুয়া পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট করলেও সেটি ধরতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিছুদিন আগে সেই তালিকা পাসপোর্টের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ওই সময়ে দায়িত্ব পালনকারী পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন দু-একজন কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। যে উদ্দেশ্যে এ বায়োমেট্রিক করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়।
অন্যদিকে গত ২২ জানুয়ারি শুরু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট সাবলীলভাবে দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিস্টেমটি নতুন হওয়ায় অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে আবেদনকারীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে তাদের দৌড়াতে হচ্ছে পাসপোর্ট অফিসে।

ই-পাসপোর্টের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ই-পাসপোর্টের কিছু সমস্যার বিষয় আমাদের কাছে আসছে। এমনও দেখা গেছে যে একজনের এমআরপি পাসপোর্টে এ কে এম লিখতে গিয়ে অক্ষরগুলোতে ডট ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ই-পাসপোর্টের আবেদনের সময় ডট দেননি। ফলে মেশিন বলে দিচ্ছে তিনি ওই ব্যক্তি নন। ই-পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিক তথ্য থাকতে হবে। নবায়নের ক্ষেত্রে যেভাবে আগের পাসপোর্ট করা হয়েছিল সে রকমভাবে না লিখলে মেশিন আবেদন নিচ্ছে না। একইভাবে কোনো কোনো কম্পিউটারের ক্ষেত্রে আবেদন না নেওয়ার অভিযোগ আমরা পাচ্ছি।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একজন একইভাবে তার কম্পিউটার থেকে অনলাইনে গিয়ে ই-পাসপোর্টের আবেদন করার চেষ্টা করেছেন। না পেরে শেষ পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসে এসে আবেদন করতে চাইলে সেখান থেকে আবেদনপত্রটি মেশিন নেয়। কী কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করছি। দ্রুতই সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন একটি বিষয়, সব ঠিক হতে একটু সময় লাগবে।’

প্রশ্নের উত্তরে মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি ই-পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিদিনই প্রিন্টের সংখ্যাও বাড়ছে। বিষয়টি কিভাবে আরো সহজ করা যায়, কী কী সমস্যা হচ্ছে—সব নিয়ে আমরা একের পর এক মিটিং করে ঠিক করার চেষ্টা করছি।’ তিনি জানান, এ মুহৃ র্তে পাসপোর্ট বইয়ের কোনো সংকট নেই।

আরেক প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, রোহিঙ্গাদের যে ডাটাবেইস করা হয়েছিল, সেটি পাসপোর্টের সার্ভারে যুক্ত করা হয়েছে। এখন কোনো রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করতে এলে যতই ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসুক, কাজ হবে না। কারণ যখনই আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে তখনই মেশিন তার পরিচয় বলে দেবে। এ ছাড়া পাসপোর্টের প্রতিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। কোনো রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করতে আসে কি না সেদিকে লক্ষ রাখা হয়। তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেইস তৈরির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যেসব ছোট শিশু বড় হচ্ছে তাদেরও আনা হচ্ছে ডাটাবেইসের আওতায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ভুয়া পাসপোর্ট করতে এসে অথবা বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে আটক হয়ে আশ্রয়শিবিরে ফেরত গেছে। তবে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট করতে পেয়েছে এবং দেশের বাইরে যেতে পেরেছে তার তথ্য নেই কারো কাছে।

যারা বিমানবন্দর এলাকা থেকে এ দেশের পাসপোর্টসহ ধরা পড়েছে, তাদের কাছ থেকে পুলিশ তথ্য পেয়েছে যে কিছু অসাধু পুলিশ, পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও দালালের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট করতে সক্ষম হয়।