ইনানীতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আড়ালে অবৈধ কার্যকলাপ

বিশেষ প্রতিবেদক •

উখিয়ার পর্যটন রাজধানীখ্যাত সমুদ্রকন্যা ইনানীকে ঘিরে বাড়ছে অপরাধ কর্মকান্ড।  আর এইসব কর্মকান্ড ঘটে উঠেছে ইনানী ভিত্তিক আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টকে ঘিরে। নারী, ইয়াবা ও মাদকসহ সব ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে এসব হাউস ও রিসোর্টগুলোতে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অপকর্ম হলেও নির্বিকার তারা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো দু’একটি অভিযান চললেও পরে আবারো একই অবস্থা। রাত হলেই এসব এলাকার পরিবেশ হয়ে যায় অন্যরকম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সকালবেলা থেকে শুরু করে রাত হলেই অভিজাত এলাকার পরিবেশ হয়ে যায় অন্যরকম। সকাল বেলায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে দ্রুত বেগে গাড়ির ছুটে চলা। দেখে যে কারোই মনে হতে পারে দ্রুত কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ছুটে চলা। কিন্তু আদৌ তা নয়। সব গাড়ি মিশছে রেস্ট হাউসে গুলোতে। সেখানে চলছে যত অপকর্ম। ভদ্রতার মুখোশের আড়ালটা কুরুচিপূর্ণের বহিপ্রকাশ। মদ, জুয়া সেই সঙ্গে উর্বশী নারীদের সঙ্গে বেহায়পনা সবই চলছে এখানে। দেখে মনে হয় প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই এখানে। অনুমোদনহীনভাবে এসব এলাকার রেস্ট হাউস গুলোতে প্রকাশ্যেই চলছে এসব।

টিএনজ তরুণী দিয়ে গেস্ট নামের খদ্দেরদের মনোরঞ্জণের জন্য ব্যবস্থা এখানে। আসলে এখানে রেস্ট হাউসের কোন বিষয় নয়। মিনি পতিতালয়। একেকটি গেষ্ট হাউসে ১০/১৫ জন তরুণী রয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য আসছেন খদ্দেরও। তাদের মনোরঞ্জন শেষে তারা চলেও যাচ্ছেন। এই রেস্ট হাউসগুলো যে এই কাজ তা নয়, এখানে মদ বিয়ারসহ রাতের বেলায় আরো জমজমাট আসর জমে। বিশেষ করে ইনানী পেবল স্টোন রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যই সবকিছু হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

অভিযোগে প্রকাশ, এইসব অপরাধের মূল মদদদাতা ইনানী প্যাবেল স্টোন বিচ রিসোর্ট। জড়িত রয়েছে ইনানী প্যাবেল স্টোন বিচ রিসোর্টের ম্যানেজার মাহফুজ। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইনানীর পর্যটকদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক রিসোর্ট ও কটেজ। হোটেল কর্তৃপক্ষরা রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার আয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত লাভের আশায় এইসব পতিতা, বিয়ার মদসহ নানান মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে থাকে। তেমনই ইনানী প্যাবেল স্টোন বিচ রিসোর্টে সন্ধ্যা নামতেই পাল্টে যায় পরিবেশ। পর্যটক ও স্থানীয় যুবকদের সরবরাহ দেওয়া হয় বিয়ারসহ নানান মাদক দ্রব্য। রিসোর্টের ম্যানেজার মাহফুজের যোগসাজশে হোটেলের বয়রা এইসব মাদক সরবরাহ দিয়ে থাকে। মাদক বিক্রির টাকা ভাগ হয় ম্যানেজার ও বয়দের মাঝে। মাদক সহজলভ্য বিধায় উখিয়ার উঠতি যুবকেরা ভীড় করে এই হোটেলে।

আরো জানা যায়, ইনানী প্যাবেল স্টোনের রিসোর্ট ঘিরে আরো জমজমাট হয়ে উঠেছে ঘন্টা ভিত্তিক রুম ভাড়ার ব্যবসা। সকাল-সন্ধ্যা এনজিও কর্মী ও পতিতাদের ঘন্টাভিত্তিক রুম ভাড়া দিয়ে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ও নেতাদের নিয়ে চলে জুয়ার আসর। এইছাড়া রুমেও সরবরাহ করা হয় বিয়ারসহ মাদক।

ইনানী প্যাবেল স্টোন রেস্টুরেন্টে আসা পর্যটক উখিয়ার রাসেল, আরফাত, মাসুদ অভিযোগ করে জানান, হোটেলটিতে খাওয়ার পরিবেশ একদম নেই। হোটেলের চারপাশের পরিবেশ অনেকটা খারাপের দিকে। কাষ্টমার সার্ভিস দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল না রেখেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও পর্যটকদের সরবরাহ দিয়ে থাকে ফ্রিজের পচাঁবাসী খাবার। আর বাইরের পর্যটক থেকে অতিরিক্ত দাম আর বকশিস ধরে নিতে স্থানীয়দের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। প্রতিবাদ করলেই তারা আরো ক্ষেপে উঠে।

এদিকে সম্প্রতি প্যাবেল স্টোনের সন্নিকটস্থ বিএম কটেজে অভিযান চালিয়ে ইনানী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সিদ্ধার্থ সাহা নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে  পতিতা ও মেম্বারসহ ৬জন আটক করে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন মেম্বার জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে বেলাল মেম্বার খদ্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে পতিতা সংগ্রহ করে তার বিএম কটেজে পতিতাবৃত্তি চালানোর পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট করে আসছিল।

ইনানী প্যাবেল স্টোন সী রিসোর্টটির বিরুদ্ধে মাদক, পতিতাবৃত্তি সহ নানান অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। 
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে জানান, হোটেলটির অবৈধ কার্যকলাপ ওপেন সিক্রেট হলেও প্রশাসনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এলাকার উঠতি যুবসমাজ এই হোটলটির কারণে ধ্বংসের পথে। 

এই ব্যাপারে কথা হয় হোটেলটির ম্যানেজার মাহফুজের সাথে। তিনি দাম্ভিকতার সুরে জানান,  আমার রেস্টুরেন্টে সচিব, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সবাই আসেন। সেবার মান নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের মান ভাল, পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় কাষ্টমার সার্ভিস দিতে একটু বেকায়দায় পড়তে হয়।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আর কোন কথা বলেননি।