ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারী

বিশেষ প্রতিবেদক :

ঈদের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সহ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ভিড় বাড়বে। ভ্রমণপিপাসু এই মানুষদের নিরাপত্তা দিতে এবার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত জুড়ে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। সৈকতের কাছাকাছি গড়ে ওঠা হোটেল, মোটেল ও কটেজ ঘিরে বিশেষ নজরদারি থাকবে। বিভিন্ন নামে আত্মপ্রকাশ করা জঙ্গি গোষ্ঠী যাতে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়টি বিশেষ আমলে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় না আসতে পারে সে বিষয়ে চেকপোস্টে নজরদারি থাকবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুরক্ষায় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমুদ্রসৈকতে আসা বিদেশি পর্যটকদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার করবে বা করছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এরই মধ্যে সমুদ্রসৈকতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করণীয় সে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আগাম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোনো গোষ্ঠী সমুদ্রসৈকত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালালে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া আগাম সতর্কতা সরকার সবসময় আমলে নিয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা সম্পর্কে দেওয়া সুপারিশে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শুধু কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত নয়, অন্যান্য সৈকত ও পর্যটনস্থান সম্পর্কে যারাই অপপ্রচারে সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। অতীতে যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, ওইসব ব্যক্তি বাড়তি নজরদারিতে থাকবে।

সমুদ্রসৈকতের যে এলাকায় বিদেশি পর্যটক অবস্থান করবেন, সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশাধিকারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে।

কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হওয়ায় বিদেশি পর্যটকদের কাছে এর আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। সৈকত এলাকায় তারা নিজেদের মতো করে চলাফেরা করে থাকেন। এই সুযোগে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাতে কোনো ধরনের অপকর্মের সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্য জানান, উগ্রবাদীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করা। পাশাপাশি বিদেশে সরকারের সুনাম নষ্ট করার অপপ্রয়াসও রয়েছে।

সূত্র জানায়, পর্যটন মৌসুম এলে উগ্রবাদীদের কোনো কোনো গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত বছরও আল-কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)-এর মতবাদে বিশ্বাসী একটি জঙ্গি গোষ্ঠী কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালায়।

সামির খান, অচিন কাব্য ও আবু খাদিজা নামে তিন ব্যক্তি তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই অপপ্রচার চালাচ্ছিল। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এসব অপপ্রচার কোনো কাজে আসেনি। তবে ওই অভিজ্ঞতার আলোকে এবার পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।