উখিয়ায় ভোটার হতে ঘাটে ঘাটে গণহয়রানি

বিশেষ প্রতিবেদক :

ভোটার তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রমে কক্সবাজারের উখিয়ায় আগ্রহী ও উপযুক্তদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ভোটার হওয়ার উপযোগী শত শত লোকজনদের এ ঘাট থেকে ও ঘাটে নানা শর্তের বেড়াজালে পড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত বিশেষ এলাকা হওয়ায় কথিত রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

গত কয়েক দিন ধরে উখিয়ার সর্বত্র আগ্রহী ও উপযুক্ত তরুণ তরুণী ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের নতুনভাবে ভোটার তালিকা ভূক্ত হতে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। তবে অনেক লোকজনকে হতাশ মনে নানা কটুক্তি করতেও শুনা যায়। রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং পূর্ব পাড়ার আপন বড়ুয়া জানান, ছোট ভাইকে ভোটার করার চেষ্টা চালাচ্ছি।জানি না করতে পারি কিনা।

কারণ অন লাইন জম্ম নিবন্ধন সনদ,মা,বাবা,ভাই, বোন,চাচা,ফুফু সহ নিকটাত্মীয়দের জাতীয় পরিচয় পত্র,হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ,জায়গা জমির খতিয়ান অথবা ভূমিহীন সনদ সহ ১৩/১৫ প্রকারের সত্যায়িত কাগজ পত্র প্রয়োজন হচ্ছে। উখিয়া সদরের মালভিটা এলাকার মোঃ ইদ্রিস বলেন, এসব কাগজ পত্র জমা দিতে পারলেই তথ্য সংগ্রহ কারীরা ভোটার নিবন্ধন ফরম দিচ্ছে।

ওয়ালা পালং গ্রামের মফিজুর রহমান ও হাজীর পাড়ার নুরুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১০ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে ছেলে মেয়েদের জন্ম নিবন্ধন সনদ করেছি। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ কারী বলেছে এসব জন্ম নিবন্ধন সনদ অন লাইনে নিবন্ধিত না হওয়ায় ভোটার ফরম দেয়া হবে না।

ডিগলিয়া পালং গ্রামের তরুণ ইমরান বলেন,২০০১ সালে জন্ম নেওয়ার পরও জন্ম নিবন্ধন করতে পারছি না। কারণ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে নাকি অনলাইন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। ইমরানের মত অনেকে ভোটার হওয়ার উপযুক্ত হলেও জন্ম নিবন্ধন না থাকায় ভোটার হতে পারছি না। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জন্ম নিবন্ধন সনদের কারণে অনেক মানুষের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করেন। ২০১৭ সাল থেকে জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় নানা ক্ষেত্রে লোকজনদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

অসংখ্য লোকজন প্রতিদিন তথ্য সংগ্রহ কারী,সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা নির্বাচন অফিস, মেম্বার – চেয়ারম্যানের নিকট ধর্ণা দিয়েও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় সরকার সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে নানা কটুক্তি করতে শুনা যায়। এত হয়রানির পরও অসংখ্য তরুণ  ভোটার অন্তর্ভূক্তি থেকে বাদ পড়ার শন্কা দেখা দিয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বেদারুল ইসলাম জানান,২০০৪ সালের ১ জানুয়ারির পূর্বে যাদের জন্ম তারা ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আগ্রহীদের বিশেষ নিবন্ধন ফরমে ২৪ প্রকারের তথ্য সম্বলিত ৪ পাতার ফরম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট সত্যায়িত কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। নিয়োজিত ৬১ জন তথ্য সংগ্রহ কারী ও ১৪ জন সুপারভাইজার গণকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের সময় রোহিঙ্গার তথ্য  সংগ্রহের ব্যাপারে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে। এরপর নির্বাচন কমিশনের গঠিত বিশেষ কমিটি সকল নিবন্ধন তথ্য ফরম যাচাই  বাছাই করবে। অনেক লোক অভিযোগ করছে তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্রদত্ত  জন্ম নিবন্ধন সনদ রয়েছে। তবে ২০১০ সালের পূর্বের অনেক জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন করা হয়নি।

কিন্তু কেন এসব জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন করা হয়নি তা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নিকট জানা হবে। কারণ এগুলো অনলাইন সার্ভারে প্রবেশ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ গুলোকে প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।