উত্তরাধিকারের রাজনীতি থেকে সরে আসছে আওয়ামী লীগ!

অনলাইন ডেস্ক •

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, যে সমস্ত রাজনীতিবিদের সন্তানরা এখনই মনোনয়ন চান তাদের অপেক্ষা করতে হবে। আগে রাজনীতিতে শক্ত ভিত গড়তে হবে, রাজনীতি করতে হবে, তারপর মনোনয়ন পেতে হবে। শুধুমাত্র পৈতৃক-সূত্রে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।

এটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির শুধু নয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বিরল এবং ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। উল্লেখ্য যে, এর আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি বিষয় ছিল যে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার পুত্র বা কন্যা বা স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়া হয় যেন তিনি সহজেই ওই মৃত্যুর আবেগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত হতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি সেই জায়গা থেকে সরে এলেন, এটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি বিরল ঘটনা।

উল্লেখ্য যে, এর আগেও আওয়ামী লীগ সভাপতি আসলামুল হকের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেন নাই, কুমিল্লায় আব্দুল মতিন খসরু মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু মনোনয়ন পাননি, কুমিল্লা-৭ আসনে অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যকে মনোনয়ন না দিয়ে প্রাণ গোপাল দত্তকে দিয়েছেন।

রাজনীতিতে এটি একটি নীরব বিপ্লব বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ এর মাধ্যমে উত্তরাধিকারের রাজনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো। দেখা যায় যে, একজন রাজনীতিবিদ তার সন্তানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখেন। তার সন্তান উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে, কোন আন্দোলন সংগ্রাম তিতিক্ষা কোন কিছুর মধ্যেই তিনি থাকেন না।

তার পিতার মৃত্যুর পর হুট করে তিনি রাজনীতিতে আসেন এবং পৈতৃক-সূত্রে গদিনশীন হন। এই অবস্থার ফলে তৃণমূলের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়, নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং তারা মনে করেন যে রাজনীতিতে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, তাদের কাজ শুধু সারাজীবন কষ্ট স্বীকার, ত্যাগ স্বীকার করা, রাজনৈতিক আন্দোলন করা, সংগঠন করা।

কিন্তু মন্ত্রিত্ব, এমপি ইত্যাদি সবই যারা পৈত্রিক-সূত্রে রাজনীতি থেকে এসেছেন তারা। আওয়ামী লীগে বা এদেরকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা হয় সোনার চামচ মুখে নেয়। তার যোগ্যতা থাক না থাক তার পইতা মন্ত্রী ছিলেন এজন্য তারা রাজনীতিতে এসেছেন এবং এলাম দেখলাম জয় করার মতো তারা রাজনীতিতে একটা পদ বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা এই অবস্থা পাল্টে দিতে চান।

আমরা যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ইতিহাস দেখি তিনি নোবডি থেকে রাজনীতি শীর্ষে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন এবং সর্বকালের সেরা বাঙালি হিসেবে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানীর মতো রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে রাজনীতি করে তাদের কাছ থেকে শিখে বঙ্গবন্ধু আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছেন।

কিন্তু জাতির পিতার মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে রাজনীতিতে পরিবার প্রথা এবং উত্তরাধিকার প্রথা চালু হয়েছিল সেটি রাজনীতিতে এক বড় বিপর্যয় ডেকে আনছে বলে অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বোধহয় অন্য পথে হাটা শুরু করলেন যে পথে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হয়েছিলেন। আর তার এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা গেল।

এটির ফলে তৃণমূলের যারা ত্যাগী পরীক্ষিত, যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, দলের জন্য কাজ করেছেন তারা উৎসাহিত হবেন। সাথে সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতেও একটি ব্যতিক্রমী পরিবর্তন আসবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।