চকরিয়ার উপকূলজুড়ে সুপেয় পানির হাহাকার

বিশেষ প্রতিবেদক, চকরিয়া •

কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে। একদিকে শুষ্ক মৌসুম, তার ওপর বোরো আবাদে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে গিয়ে ভূ–গর্ভের পানি উত্তোলনের কারণে গত একমাসেরও বেশিসময় ধরে উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে পানির জন্য এই অবস্থা বিরাজ করছে।

বিশেষ করে উপকূলীয় বদরখালীর অন্তত শতাধিক গ্রামের মানুষ পড়েছে বেশি বেকায়দায়। এই অবস্থায় হাজারো পরিবারে খাবারের পানি তথা সুপেয় পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ বলেন, বদরখালীর প্রতিটি পাড়ায় এখন খাবারের পানির জন্য চলছে হাহাকার। কলেজ পাড়া, ছনুয়া পাড়া, মাতারবাড়ী পাড়া, শহরিয়া পাড়া, সাতডালিয়া পাড়া, আজম নগর পাড়া, লম্বাখালী পাড়া, বাজার পাড়া, নয়াপাড়া, ভেরুয়াখালী পাড়া, পূর্ব–পুকুরিয়া খাসপাড়া, মগনামা পাড়া, টুটিয়াখালী পাড়া, মামা ভাগিনা পাড়া, কুতুবনগর পাড়া, চার–গইজ্জা পাড়া, গোয়াখালী পাড়া, আমিরখালী পাড়া, নাপিতখালী পাড়ার একাংশ, নতুন ঘোনা, কলেজ পাড়ার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। যেখানে আমি নিজেও ভুক্তভোগী।

সরেজমিন দেখা গেছে, বদরখালী ইউনিয়নের এসব পাড়ায় ব্যক্তিগতভাবে মানুষের বাড়ি–ভিটায় বসানো অগভীর নলকূপগুলো একেবারেই অকেজো হয়ে পড়েছে। শত চেষ্টা করেও এক ফোঁটা পানির দেখা পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এমনকি গভীর নলকূপ দিয়েও অনেক স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের দেখা মেলে তাহলে আপাতত সমস্যা কেটে যাবে।

ন্যায্যতার ভিত্তিতে উপকূলীয় মানুষের সুপেয় পানির দাবি নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করছেন বেসরকারি সংস্থা আইএসডিই বাংলাদেশ। সংস্থাটির কর্মসূচি সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক আজাদীকে জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের তলদেশ ও মাতামুহুরী নদী ভরাট হয়ে গেছে। এতে সাগরের লবণাক্ত পানি উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীর পানির অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে এবং মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে সচরাচর ভূ–গর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যায়। আর উপকূলীয় এলাকা হলে তো কথাই নেই। তাছাড়া চলমান বোরো আবাদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ভূ–গর্ভের পানি তোলা হচ্ছে দেদার। তাই আশপাশের গভীর নলকূপেও পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। এই অবস্থায় অগভীর নলকূপে পানি তো একেবারেই উঠবে না।

তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে এই সমস্যায় পড়তে না হয় উপকূলের মানুষকে। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ইতোমধ্যে চকরিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী উপকূলীয় বদরখালীর বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।

একইসাথে বর্তমানে ভূ–গর্ভের কত ফুট নিচে পানি রয়েছে তাও পরীক্ষা–নিরীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের দেখা মিললে আপাতত এই সমস্যা থাকবে না।