চকরিয়ায় একরাতে ১০ নবজাতকের জন্ম!

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :

টানা সাতদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। এই অবস্থায় ঘরে থাকা সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীকে চরম দুচিন্তায় ভুগছিলেন মোস্তফা কামাল। এরই মধ্যে বুধবার সন্ধ্যার প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যেতে থাকে স্ত্রী জান্নাতুল মামুরীর। অন্যদিকে কোমড় সমান পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ির ভেতরের অংশ।

এই অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন চকরিয়া উপজেলা সদরের দিকে। তাৎক্ষণিক টাকা পয়সাও জোগাড় করতে পারেনি মোস্তফা কামাল। তাতে কী। তবু স্ত্রীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। অনাগত সন্তানের নিরাপদ ডেলিভারি করতে তিনি সোজা চলে যান চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে।

মোস্তফা কামাল জানালেন, বুধবার রাতে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের প্রসুতি ওয়ার্ডে কোনধরনের ঝামেলা ছাড়াই স্ত্রী জান্নাতুল মামুরীকে (২৬) ভর্তি করাতে পেরেছেন। তাতে তিনি ও পরিবার সদস্যরা খুশি। প্রসুতি মামুরী ভর্তি হবার পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মিট ওয়াইফ সুমাইয়া আক্তার ও নার্স শরীফা খাতুন যথারীতি শারীরিক সবধরনের চেক-আপ ও রোগীর পরিচর্যা শুরু করেন। এরইমধ্যে রাত সাড়ে বারোটার দিকে মোস্তফা কামালের স্ত্রী জান্নাতুল মামুরী নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম দিয়েছেন জমজ নবজাতক। একসঙ্গে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেছে মোস্তফা কামালের দুই মেয়ে।

এভাবে বন্যার দুর্যোগ দুর্দিনে বুধবার রাত বারোটার পর থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রসুতি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া আরও আটজন গর্ভবতী নারী নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম দিয়েছেন আরও ৮ নবজাতক। ১০ আগস্ট একরাতে প্রসুতি ওয়ার্ডে বিনা খরচে নরমাল ডেলিভারিতে ১০ নবজাতকের জন্ম লাভের এই কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মিট ওয়াইফ সুমাইয়া আক্তার ও নার্স শরীফা খাতুন। আর বন্যার দুর্দিনে প্রসুতি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে নরমাল ডেলিভারি ১০ নবজাতকের জন্ম এবং মা-নবজাতকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করেছেন হাসপাতালের টিএইচও ডা. শোভন দত্ত নিজে।

চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাঃ শোভন দত্ত বলেন, পুরো চকরিয়া উপজেলা যখন অথৈ পানিতে নিমজ্জিত, তখন হাসপাতালের মেডিকেল টিম প্রস্তুত ছিলেন দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে। একইভাবে হাসপাতালের প্রসুতি ওয়ার্ডের মিট ওয়াইফ-নার্সরাও ছিলেন প্রসুতি রোগীদের সেবা নিয়ে। এরই অংশ হিসেবে ১০ আগস্ট একরাতে আমরা বিপদাপন্ন প্রসুতী রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে নরমাল ডেলিভারিতে ১০ নবজাতকের জন্ম লাভে সহায়তা দিয়েছি। এটি আমাদের কর্তব্যও বটে।

চকরিয়া হাসপাতালের প্রসুতি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিট ওয়াইফ সুমাইয়া আক্তার বলেন, ১০ আগস্ট একরাতে জন্ম নেওয়া নবজাতক ও সেবা দেওয়া প্রসুতি নারীরা হলেন চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা এরফান উদ্দিনের স্ত্রী তাহিয়া (২২)। তিনি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তফা কামালের স্ত্রী জান্নাতুল মামুরী (২৬)। তিনি জন্ম দিয়েছেন জমজ মেয়ে। উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকার মোহাম্মদ রাসেল এর স্ত্রী শারমিন আক্তার (১৯)। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে। সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর এলাকার আবদুর শুক্কুর এর স্ত্রী রুবি আক্তার (৩৩)। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে। চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা এলাকার ইমন এর স্ত্রী তানিয়া আক্তার (২০)। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে। মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ এর স্ত্রী রিপাত আক্তার (২৫)। তিনি জন্ম দিয়েছেন ছেলে। চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী বুলবুল আক্তার (২৫)। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান এর স্ত্রী আফসানা আক্তার (২০)। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল হালিম এর স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম (৩৫)। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে নবজাতক।

চকরিয়া হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্ত বলেন, নবজাতক ও প্রসুতি উভয়ে শারীরিক ভাবে সুস্থ আছেন। গতকাল সবাই হাসিমুখে তাদের নবজাতক সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।