নির্বাচনে থাকার সুযোগ পেতে পারেন রাজনীতিতে স্বাধীনচেতা কাজল-জাহাঙ্গীর!

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :


কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ওসমান সরোয়ার আলম চৌধুরীর দুই পুত্র সোহেল সরওয়ার কাজল ও সাইমুম সরওয়ার কমল, সম্পর্কে আপন ভাই হলেও রাজনীতির মাঠে যাদের নিজস্ব স্বকীয়তায় পরস্পরের অবস্থান।

বড় ছেলে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন।

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় স্বপদ থেকে পদত্যাগ করলেও অংশ নেননি ভোটে।

ঐ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাজলের ছোট ভাই সাইমুম সরওয়ার কমল, যিনি বর্তমান সংসদের হুইপ।

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দুই ভাই যতবারই অংশ নিয়েছেন, দল এক হলেও ভিন্ন ছিলো একে অপরের রাজনৈতিক তৎপরতা।

২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। ২০২১ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো জিতে  বর্তমানেও এই পদে আসীন আছেন তিনি।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট পুত্র জাহাঙ্গীর ২০১৪ থেকে টানা ৮ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর ২০২২ সালের ২৮ জুলাই উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন।

জাহাঙ্গীরের আপন বোন শাহীন আক্তার কক্সবাজার-৪ আসন থেকে পরপর দুই বার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য। জাহাঙ্গীর এই দুই নির্বাচনে বোনের বিপরীতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

এছাড়াও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দলের একক প্রার্থী হিসেবে নিরংকুশ সমর্থন পান জনপ্রতিনিধিত্ব করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই রাজনীতিবিদ।

২৯ মে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে রামু ও উখিয়ায় ভোট গ্রহণ করা হবে।

কাজল এবং জাহাঙ্গীর এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিয়ে স্ব স্ব উপজেলায় ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।

অন্যদিকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তায় রাজনীতি করা এই দুই হেভিওয়েট নেতার দল আওয়ামী লীগ।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া সংসদ সদস্যদের স্বজনরা ভোটে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

কোন এলাকায় এক জন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলে  এবং তিনি এমপি-মন্ত্রীর স্বজন হলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ জানিয়েছেন, সেক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বুঝে নেওয়া হতে পারে।

আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হানিফ জানান, ” এখন যদি একজন উপজেলা চেয়ারম্যান থাকেন, তিনি আবার যদি কোন মন্ত্রী বা এমপির স্বজন হন তাহলেও কি তিনি ভোটের মাঠ থেকে সরে যাবেন? আবার অনেক জায়গায় আমাদের দলের একজনই প্রার্থী আছেন। তিনি আবার কোন মন্ত্রী বা এমপির স্বজন। তিনি যদি সরে যান তাহলে আমাদের আর কোন প্রার্থীই থাকবে না। এমন নানা ধরনের সংকট আছে৷ পরিস্থিতি বুঝেই দলীয় হাইকমান্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।”

তবে তিনি উল্লেখ করেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি কেউ নির্বাচন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সব মিলিয়ে সমীকরণ বলছে, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার সুযোগ পেতে পারেন রাজনীতির অঙ্গনে স্বাধীনচেতা হিসেবে পরিচিত কাজল ও জাহাঙ্গীর।

রামুর ১১ ইউনিয়নে নিজের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার কথা জানিয়ে সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ” ২০১৯ সালে রামুর লাখো মানুষ সকল ষড়যন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন। এবারো আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। ”

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ” জনগণের  ভালোবাসা ও দলের প্রিয় নেতাকর্মীদের সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে নির্বাচনে প্রার্থী হতে। সেবা করার ব্রত নিয়ে আমার রাজনীতির পথচলা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে বিশেষায়িত উপজেলা উখিয়াকে যোগ্য অংশীদারে পরিণত করতে চাই। ”

রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবুল ফজল জানান, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ইতিমধ্যে উখিয়া উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক উন্নয়ন ও ভূমিকা রেখেছেন। ইতিমধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নে অর্ধ ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন। যা উখিয়ার ইতিহাসে বিরল। পাশাপাশি রাজা পালং ইউনিয়নকে গড়ে তুলেছেন একটা মডেল ইউনিয়ন হিসেবে। চারিদিকে শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া ও দৃষ্টিনন্দন টেকসই পরিবর্তন।

বিগত সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তারকে বিজয় করার জন্য মাঠে ময়দানে তিনি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। উখিয়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫ টি ওয়ার্ড (প্রতি ওয়ার্ডে ৬ টি করে ) ২৭০ টি মহিলা সভা, ৪৫ ওয়ার্ডে ৪৫ টি কর্মী সমাবেশ, ২৫ টি পথ সভা ও কোটবাজার-উখিয়া পৃথক বিশাল সমাবেশ করা হয়েছে তার একক নেতৃত্বে। যার ফলে শাহীন আক্তারের বিজয় অনেকটা সহজ হয়ে উঠে ছিল। তাছাড়াও দলের মধ্যে রয়েছেন তার একক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ। সরকারি দলের বর্তমান সভাপতি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের উপর রয়েছেন তার ব্যাপক প্রভাব। যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতেও তিনি এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পথে!

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে এবং প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে ১৩ মে। এবারই প্রথম রামু ও উখিয়া উপজেলার ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।