এমপি দুর্জয়ের দুই হাত মাদকের দুই গডফাদার!

বাংলানিউজ ◑

মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নানা অপকর্মের ঘটনা যখন দেশব্যাপী টক অব দ্য টাইমে পরিণত হয়েছে- তখন তার একান্ত ঘনিষ্ঠজনদের কারো কারো ন্যক্কারজনক ইতিহাসও সামনে আসতে শুরু করেছে।

এমপি দুর্জয়ের সহযোগীদের অন্যতম হচ্ছেন জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুর রাজ্জাক রাজা এবং মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার। বর্তমানে কখনো এমপি দুর্জনের সঙ্গে, কখনো পৃথকভাবে ইতিবাচক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে এই দুজন গণমাধ্যমের ইতিবাচক শিরোনাম হচ্ছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এক ভয়ঙ্কর তথ্য।

এমপি দুর্জয়ের দুই হাত বলে কথিত আব্দুর রাজ্জাক রাজা ও আবুল বাশারের এক সময় ছিলেন মাদক কারবারিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, দিতেন তাদের মদদও। আর তাদের নাম রয়েছে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তৈরি গডফাদারদের তালিকায়। গুগলে সার্চ দিলেও বেরিয়ে আসছে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোতে আসা তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের তথ্য, যেখানে তারা চিহ্নিত মাদকের গডফাদার হিসেবে।

হাতে আসা তালিকায় দেখা যায়, এর এক নম্বর পয়েন্টে রয়েছে মানিকগঞ্জের ১৪২ জন মাদক চোরাকারকবারী ও সরবাহকারীর নাম ও ঠিকানা। দ্বিতীয় পয়েন্টটির শিরোনাম হচ্ছে ‘অবৈধ মাদক চোরাকারবারী ও সরবরাহকারীদের পৃষ্ঠপোষক/ আশ্রয়-প্রশ্রয়কারীদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ নামীয় তালিকা’। তালিকার দ্বিতীয় নামটি আব্দুর রাজ্জাক রাজার এবং তৃতীয় নামটি আবুল বাশারের।

আব্দুর রাজ্জাক রাজার নামের সঙ্গে তথ্য দেওয়া হয়েছে পিতা দোয়াত আলী, গ্রাম বাওইপাড়া, ডাকঘর পূর্ব দাশরা, থানা ও জেলা মানিকগঞ্জ। আবুল বাশারের নামের সঙ্গে দেয়া তথ্য হচ্ছে গ্রাম- শহীদ রফিক সড়ক, থানা ও জেলা মানিকগঞ্জ। এই আবুল বাশার এবং বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য আবুল বাশার যে একই ব্যক্তি তার প্রমাণ আরো একটি নথি- সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন। যে প্রজ্ঞাপনে আবুল বাশারকে পরিষদের সদস্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে তাতেও দেওয়া হয়েছে হুবহু একই ঠিকানা।

মানিকগঞ্জ মাদক লিখে সার্চ দিলেই তাদের নাম:
গুগলে ঢুকে মানিকগঞ্জ মাদক লিখে সার্চ দিলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের যেসব শিরোনামে অন্তত দুজনের মাদক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় সেই শিরোনামগুলোর মধ্যে আছে “মাদক ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও”, ‘রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বখাটে কিশোর গ্রুপ’ প্রভৃতি।

‘রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বখাটে কিশোর গ্রুপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মানিকগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাপস নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের সদস্য চারজন- সাইফুল ইসলাম, পাপ্পু ঘোষ, মিঠু ও রাজা। ছাত্রলীগের সমর্থক, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের এই গ্রুপের সদস্যরা শহরের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার পাশাপাশি মাদক সেবন ও বিক্রি করে। অভিযোগ, জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য আবুল বাশার মানিকগঞ্জ শহরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তাপস তারই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মাদক ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও প্রতিবেদনটিতেও রয়েছে বাশারের নাম। এতে বলা হয়, সরকারি প্রতিবেদনে মানিকগঞ্জ জেলার ২৯ জনের বিরুদ্ধে মাদকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে পৌর ছাত্রলীগের কর্মী সৌরভ হোসেন ও শাকিল হোসেন এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়- এঁরা দুজনই জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশারের ঘনিষ্ঠ। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে যুবলীগের নেতা আবুল বাশার বলেছিলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

ফোনে যোগাযোগ করা হলে এমপি দুর্জয়ের ঘনিষ্ঠজন জেলা পরিষদের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার বলেন, একটি তালিকায় মাদক কারবারিদের প্রশ্রয়দানকারী হিসেবে তার নাম এসেছিল এ কথা সত্য, তবে অভিযোগ সত্যি নয়। কোন মাদক কারবারীকে চেনেন না বলেও দাবি করেন তিনি।

গণমাধ্যমে এসেছে মাদক কারবারী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাপস আপনার নিয়ন্ত্রণে, এটা সত্যি কিনা এ প্রশ্ন করা হলেও বাশার অস্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, তাপসের সঙ্গে তার ওঠাবসা আছে, কিন্তু তাপস মাদক কারবার করে না।

যোগাযোগ করা হলে এমপি দুর্জয়ের দুই হাতের এক হাত বলে পরিচিত জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র রাজা বলেন, তিনি কখনোই কোন মাদক কারবারীকে প্রশ্রয় দেননি।