কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে গতি নেই

লোকমান হাকিম ◑

কলেজ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পরও ৫০০ শয্যার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় পর্যটন নগরীর মানুষ যেমন সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নত শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে এ অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অবহেলা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন বিশিষ্টজনেরা।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ওই বছরের ৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য শহরের জানারঘোনা এলাকায় ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ১০ তলা বিশিষ্ট স্থায়ী ক্যাম্পাস পায় কলেজটি। বর্তমানে ৬ তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিন তলা বিশিষ্ট দুটি হোস্টেল, শহীদ মিনার, মসজিদ এবং একটি আণবিক চিকিৎসা কেন্দ্রের ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। কিন্তু গেল ১১ বছরে অন্যান্য অবকাঠামো দৃশ্যমান হলেও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের গতি নেই।

মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই কলেজে ১ বছর মেয়াদী হাতে-কলমে শিখনসহ (ইন্টারশীপ) স্নাতক পর্যায়ের ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে; যাতে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। বর্তমানে এই মেডিকেলে ৪২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা বলেন, “মেডিকেল কলেজের সাথে টিচিং হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন। অর্থাৎ হাসপাতাল না থাকলে মেডিকেল কলেজ-ই হয়না। এখনও পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল হয়নি। শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে প্রত্যেক দিন সকাল-বিকাল কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে অস্থায়ী হাসপাতাল গন্য করে ক্লাস করতে হচ্ছে।”

কলেজের ১১ তম ব্যাচের ছাত্র তানভীর চৌধুরী বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে হাসপাতালটি এখনো নির্মাণ হয়নি। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল অনেক দূরে। প্রতিনিয়ত যাতায়াতে অসুবিধায় পড়তে হয়।”

একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী আফিয়া তাসনিম বলেন, “আমাদের মেডিকেল কলেজের সবকিছুই ভালো। হোস্টেল এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশও সুন্দর। হাসপাতাল থাকলে আরও অনেক সুবিধা হতো। আমাদের যাতায়াতে সময় নষ্ট হতোনা।”

আফিয়া তাসনিম বলেন, “অনেক সময় টমটমে করে সদর হাসপাতালে যেতে হয়। সময় এবং সামর্থ্য দুটোতেই ঘাটতি থাকে। যত দ্রুত ক্যাম্পাসে হাসপাতালটি নির্মাণ হবে আমাদের জন্য ভালো হবে।”

অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা আরও জানান, “কক্সবাজার মেডিকেল কলেজসহ দেশের ৪ মেডিকেল কলেজের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি বছর দেড়েক আগে একনেকে পাসও হয়েছে। ওই প্রকল্পে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ ধরা হয় ৬০০ কোটি টাকা।”

প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, “১০ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন (প্রতি ফ্লোরে স্পেস হবে ১ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার ফিট), ডক্টরস কোয়ার্টার, নার্সেস কোয়ার্টার, অডিটরিয়াম, কনফারেন্স রুম, আলাদা সড়ক, ছাত্রছাত্রী বাড়লে হোস্টেল নির্মাণ ইত্যাদি।”

তিনি বলেন, “একনেকে পাস হওয়ার পর থেকে দেশের বাকী তিনটি মেডিকেল কলেজের হাসপাতালসহ অবকাঠামো নির্মাণ হলেও কক্সবাজার মেডিকেলের হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রমের কোন উন্নতি হয়নি, ঝিমিয়ে পড়েছে প্রকল্পটি। বারে বারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি মাঠ পর্যায়ে হাসপাতালসহ অন্যান্য কাজগুলো যেন শুরু হয়।”

হাসপাতাল নির্মাণে বিকল্প অর্থের উৎস:

অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহার মতে, “ ৫০০ শয্যার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে (ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং প্রসেস) ডিপিপির উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও বিকল্প হিসেবে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করা যেতে পারে।”

তিনি বলেন, “কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সমস্যা একটা বড় ইস্যু। ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় অনেক কার্যক্রম হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যসেবায় প্রায় ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম হবে। যেটাতে অর্থ দিচ্ছি বিশ্বব্যাংক।”
অন্যদিকে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে জন্য লাগবে ২০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে আমরা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তিনি আর বলেন, “কক্সবাজারের স্থানীয় জনসংখ্যা এবং ১০ রোহিঙ্গার চাপ সামাল দেওয়ার মত পরিস্থিতি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নাই। সদর হাসপাতাল এমন এক জায়গায় অবস্থিত ইচ্ছে করলেও অবকাঠামোর উন্নয়ন করার সুযোগ নাই। ভবনগুলোও পুরোনো। সেই হিসেবে যদি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ তাহলে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সেবা বাড়বে। সদর হাসপাতারের চিকিৎসা জট কমে আসবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত যাতায়াত সেটা আর করা লাগবে না।”