মুক্তি কক্সবাজার’র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ: রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ী ও আঙ্গিনা সবুজে ঘেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক •

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে দেশি-বিদেশি ত্রাণ পেয়ে যাচ্ছে।
এসব ত্রাণের মধ্যে তাঁবু, চাল, ডাল, বিস্কুট, তেল, কাপড়, ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কিছুই বাদ নেই। তবে ত্রাণের উপর নির্ভর করে তো আর পরিবার চলেনা।

অনেক সময় রুচি- চাহিদা অনুসারে খাবারও প্রয়োজন। শুধু চাল, ডাল আর আলু দিয়ে কয়দিন খাবেন। কেউ তো ত্রাণ হিসেবে সবজি দেবে না। কিন্তু শরীরে পুষ্টি জোগাতে সবজি দরকার। তাই খাবারে বৈচিত্র্য আর স্বাস্থ্য ও রোহিঙ্গা শিবিরে সবুজায়নের কথা ভেবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ইউএনএইচসিআর-এর অর্থায়নে মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়িত “Improving Peaceful Co-existence and Self-reliance Opportunities for Refugee and Host Community (IPCoSO) Project” প্রকল্পের আওতায় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৩, ক্যাম্প-৪, ক্যাম্প-১৭ ও ক্যাম্প-৪ (বর্ধিত) এর ৪ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পরিবারকে সবজি বাগানের জন্য কৃষি উপকরণ ( সবজি চারা, বীজ, ভার্মি কম্পোস্ট, বস্তা,বালতি, জাল,বাঁশ, এবং জৈব্য বালাই নাশক) ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে।

নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি ফলাতে পেরে খুশি রোহিঙ্গা শিশু

জানা যায়, রোহিঙ্গারা সবজি উৎপাদন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত ভার্টিকাল সবজি বাগান প্রতিষ্ঠাকরণ এবং সবজি বাগান প্রতিষ্ঠাকরণ সুবিধা পাচ্ছেন ও গ্রহণ করছেন। আর এ বীজ বসতবাড়ির আশে-পাশে এবং ঘরে চালে মাচা করে বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা নিজেরাই পূরণ করছে এবং অতিরিক্ত ফল বাজারে বিক্রি করে আয়ও করছে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত সবজি কীটনাশক ও অন্যান্য ভেজালমুক্ত হয়। এতে করে রোহিঙ্গারা ঝুঁকছে সবজি চাষে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার রোহিঙ্গা শিবিরের কুতুপালং ক্যাম্প-৩, ক্যাম্প-৪ ও ক্যাম্প-১৭তে বাড়ির আঙ্গিনায় ও ঘরের চালে সবজির চাষ হয়েছে। এতে করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ন্যাড়া পাহাড় গুলো এখন সবুজ হয়ে আসছে।

কথা হয় রোহিঙ্গা নারী ক্যাম্প-১৭ এ ৯৪ ব্লকের সেতারা বেগম,হাসিনা আক্তার,সেতারা বেগম,সলিমা খাতুন, হাজেরা বিবির সঙ্গে।

তারা জানান, মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক সবজি চাষের জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছি। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো চাহিদামতো ফলন পাবো না। কিন্তু মুক্তি কক্সবাজার এর কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শে অনেক ভালো ফলন হয়েছে। এখন আমাদের চাহিদা মিটিয়ে কিছু বিক্রিও করতে পারছি।

তারা আরও বলেন, নিজেরা পরিচর্যার মাধ্যমে আমরা সহজেই নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছি। কেননা বাজার থেকে প্রাপ্ত সবজি বিভিন্ন ভেজালযুক্ত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি হওয়ায় আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের মারাত্বক রোগের হুমকীর মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ফলে আমরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি। এমতাবস্থায়, নির্ভেজাল সবজি এবং পুষ্টির চাহিদা পূরনে বসতবাড়ির আশে-পাশে সবজি চাষের কোন বিকল্প নাই।

তাছাড়া কুমড়োর মাচা রৌদ্রের খরতাপ থেকে ঘরকে ঠান্ডা রাখে। এসব বিবেচনায় চাল কুমড়া গাছকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

মুক্তি কক্সবাজার টিম

ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে মুক্তি কক্সবাজার এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোঃ ওসমান গণী বলেন, ইউএনএইচসিআর-এর অর্থায়নে মুক্তি কক্সবাজার ২০১৯ সাল থেকে ২২ সাল পর্যন্ত উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছি। এর মধ্যে ৪ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পরিবারকে সবজি বাগানের জন্য কৃষি উপকরণ ( সবজি চারা, বীজ, ভার্মি কম্পোস্ট, বস্তা,বালতি, জাল,বাঁশ, এবং জৈব্য বালাই নাশক) দিয়েছি। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি যাতে করে তারা নিজেরাই ভালো ফলন ফলাতে পারে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের মাঠ কর্মকর্তারা সার্বিক সহযোগিতা করে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, ব্যতিক্রমী চিন্তা থেকেই মনে হলো, শুধু চাল, ডাল আর আলু দিয়ে কয়দিন খাবে। কেউ তো ত্রাণ হিসেবে সবজি দেবে না। খাবারে বৈচিত্র্য এবং স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই বীজ কিনে চারা গজিয়ে সবজি গাছ বিতরণের পরিকল্পনা নিই।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার বলেন, অনেকে অনেক রকম ত্রাণ দিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মাঝে সবজি চাষের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে চাল কুমড়া বড় হলে ঘরের চালে ছায়া দিবে। অন্যদিকে চাল কুমড়া ও শাক দুটোই খাবার হিসেবে উপকারে আসবে।