কক্সবাজারের বেহাল সড়কে দুর্ভোগ চরমে, চড়া দামে খেসারত দিচ্ছে মানুষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
পর্যটন জেলা কক্সবাজারের সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না যানবাহন। খানাখন্দে ভরা সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।

ভাঙাচোরা সড়কের কারনে ইতোমধ্যে বিভিন্ন যানবাহনের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে মালিকরা। আবার রোহিঙ্গাদের কারনে সবচেয়ে স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েছে। মিলছেনা নিত্যপণ্য বাজারও। সেই দৃশ্য এখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও প্রভাব পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে কোন মানুষ জরুরী কাজে বিভাগীয় শহরে যেতে পারছে না চাহিদামত। গেলেও গাড়ি সংকট ও বেহাল সড়কে কোমর ভেঙে যায়।

সেই বর্ধিত ভাড়ার প্রভাব পড়েছে চালসহ তরিতরকারি ও নিত্যপণ্যে। সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে একদিকে দুর্ভোগ অন্যদিকে নিত্যপণ্যে চড়াদামে খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এভাবে উখিয়া-টেকনাফের মানুষের বোবাকান্না বিরাজ করছে প্রতিনিয়ত। আর জিও-এনজিও’র গাড়ির জন্য ঠাসা হয়ে পড়েছে সবখানে। যার কারনে সমস্ত সড়কের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। নেই কোন উদ্যোগের ব্যবস্থা। সরকার ও এনজিও আছে শুধু রোহিঙ্গাদের পাশে উন্নয়ন আর সেবা নিয়ে।

পর্যটনেও বেহাল সড়কের প্রভাব : বেহাল দশা পর্যটন শহর কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনসহ সৈকত এলাকার সড়ক ও উপ-সড়কগুলোর। খানা-খন্দক ও ভাঙা রাস্তায় চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কক্সবাজার ভ্রমণে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এই কারণে দিন দিন পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলে অভিযোগ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে টেন্ডারের কাজ শেষ হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে রাস্তা-ঘাট সংস্কার করা হবে বলে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। যেখানে প্রতিবছরই ছুটে আসেন দেশি-বিদেশি লাখ লাখ পর্যটক। পর্যটকদের রাত্রিযাপনে গড়ে উঠেছে হোটেল-মোটেল জোন। যে জোনে রয়েছে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট। সেই হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ অধিকাং এনজিওদের দখলে। বাহিরের পর্যটকরা চাহিদামত ও ন্যায্যদামে রুম পাচ্ছেনা।

পর্যটকদের অভিযোগ-পর্যটকদের জন্য হোটেল মোটেল জোন গড়ে উঠলেও এখনো হোটেল মোটেল জোনসহ সৈকত এলাকার সড়ক উপ-সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। বেড়াতে এসে খানা-খন্দক, ভাঙা-চোরা রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচল করতে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ ২০ বছরেও হোটেল মোটেল জোনের সড়ক উপ-সড়কগুলো সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাস্তাগুলো যেমন পরিকল্পনা অনুযায়ী হওয়ার উচিত তার কোনো চিহ্নই আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে অসন্তুষ্ট হয়ে পর্যটকরা কক্সবাজার ত্যাগ করেন।

এদিকে ভাঙ্গা সড়ক শুধু কক্সবাজার শহর ও হোটেল-মোটেল এলাকা নই। এরকম চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফের অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। এরকারনে যানবাহনেও ক্ষতি হচ্ছে রীতিমত যন্ত্রাংশ। ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কার্পেটিং, ইট, বালু ও খোয়া উঠে খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার সবকটি সড়ক। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত হয়ে ছোট ছোট পুকুরে পরিণত হয়েছে। বেহাল এই সড়ক দিয়ে যানবাহন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। এজন্য এই সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এভাবে সড়ক সংস্কার না করে আর কয়েকমাস অতিবাহিত হলে মানুষের যাতায়াত তো দুরের কথা যানবাহন চলাচল অনুপযোগি ও পর্যটক বিমূখ হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বলতে গেলে জেলার প্রধান সড়ক এখন ক্ষতবিক্ষত।

টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের অবস্থা সবচাইতে চলাচল অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বেহাল অবস্থায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। কিছুদূর অন্তর অন্তর সড়কে হয়ে গেছে বিশাল বিশাল গর্ত। এ কারণে যানবাহনের গতি কমে গেছে। বেড়েছে দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। কক্সবাজার জেলাবাসীর আর্তি, দয়া করে জরুরি ভিত্তিতে সড়কের গর্তগুলি ভরাট করার ব্যবস্থা করুন।

উখিয়া-টেকনাফের ১৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গা ৬ লাখ স্থানীয় বাংলাদেশী অতিরিক্ত যানবাহন, জিও-এনজিওদের পরিবহন গাড়ী, প্রাইভেট গাড়ী, ট্রাক পরিবহন ও স্থল বন্দরের আমদানি পরিবহন ট্রাকের ছাপ এবং পদভারে টেকনাফ কক্সবাজার সড়ক চৌচির হয়ে গেছে। সড়কের উভয় পাশ্বে খানাখন্দক এবং বাজার, দোকান স্থাপিত হওয়ায় সড়ক যাতায়াত এখন রীতিমতো ঝুঁকিতে পরিনত হয়েছে। নিত্যদিন সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যেতে যেখানে ২ ঘন্টা সময় লাগে সেখানে বর্তমানে পৌছতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। এ অবস্থায় অনেকেই কক্সবাজার আদালতে হাজিরা বা মামলা পরিচালনা করতে বিলম্ব হয়ে পড়ে। ফলে যাত্রী সকল আর্থিক ও শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ৮৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় সড়ক রোহিঙ্গা ও এনজিওদের পদভারে জর্জরিত। যার কারণে দীর্ঘ সড়ক যোগাযোগ এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আজ এমন অবস্থায় পৌছেছে যে, উভয়মূখীর একটি বাস অন্য একটি বাস অথবা ট্রাককে সাইট দিতে পারেনা।

অনেক সময় এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় রোহিঙ্গাদের আশ্রিত ক্যাম্প ও বাজার সড়কের পাশ্বে। এছাড়া পাহাড়ী ঢলের বৃষ্টির পানি সরাসরি সড়কের উপর দিয়ে চলে যাওয়ার কারণে সড়কটি দক্ষিণ সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৬লাখ বিভিন্ন পেশাজীবি কর্মজীবি মানুষ ১২ লাখ রোহিঙ্গার কারণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

টেকনাফ কক্সবাজার আঞ্চলিক সড়কের পাশ্বে অবস্থিত মরিচ্যা বাজার, কোটবাজার, উখিয়া বাজার, পালংখালী বাজার, হোয়াইক্যং বাজার, মিনাবাজার, খারাংখালী বাজার, মৌলভী বাজার, হ্নীলা বাজার, লেদা বাজার ছাড়াও আরো অসংখ্য ছোটখাটো বাজার সড়কের পাশ্বে বেঙের ছাতার ন্যায় গজে উঠেছে। যার কারণে সড়কটি যাতায়াতে চরম ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। ১৫ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা কাজের সন্ধানে এলাকায় ও বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।

অবাধ যাতায়াতের কারণে যানবাহন থাকে তাদের দখলে। বিশেষ করে টেকনাফ পৌর শহরটির অবস্থা আরো করুণ। রোহিংগা শ্রমিক, টমটম, অটোরিক্সা, সিএনজি, ছাদের গাড়ীর চালক প্রায় রোহিঙ্গা। টেকনাফ পৌর ষ্টেশনটি বিভিন্ন যানবাহন ও পরিবহনের বাস ষ্টেশনে পরিনত হয়েছে। ফুটপাট, ভাসমান দোকান, বাস কাউন্টার তেলের ড্রাম, মাছ বাজার ও তরিতরকারী বাজার ষ্টেশনটি দখল করে নিয়েছে।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় যানজট লেগেই থাকে। এ সময় কোন মুমূর্ষরোগী সহজে সরকারী হাসপাতালে যেতে বাঁধার সম্মূখীন হয়। যাত্রীসহ এ অবস্থায় দুর্ভোগের শিকার হয়। পথচারীরা পর্যন্ত নিজ গন্তব্যস্থানে যেতে পারে না। এসময় স্কুলগামী ছাত্র/ছাত্রী ও সরকারী চাকুরীজিবিরা নির্ধারিত সময়ে প্রতিষ্ঠানে পৌছতে বিলম্ব হয়। পর্যটন শহর ও সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ মাধ্যম ও সীমান্ত পর্যটন শহর টেকনাফ-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কটি উন্নয়ন অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।