কক্সবাজারে একদিনে ৩ খুন

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ এবং পেকুয়ায় পৃথক ঘটনায় একদিনে ৩ জন খুন হয়েছেন। খুন হওয়াদের মাঝে একজন নারী ও একজন রোহিঙ্গা রয়েছেন। রোববার (১০ জানুয়ারি) ভোররাতে এসব ঘটনা ঘটে।

এরমধ্যে টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পে রোঙ্গিঙ্গা দুই গ্রুপের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় নিহত হন নুর হাকিম (২৭); তিনি ২১ নম্বর ক্যাম্পের সি-ব্লকের বাসিন্দা হোসেন আলীর ছেলে।

উখিয়ায় জবাই করে খুন করা দোকান কর্মচারি ফোরকান আহমদ ওরফে কালু (২২) রত্না পালং ইউনিয়নের তেলিপাড়া এলাকার বশির আহমদের ছেলে।

অন্যদিকে পিটিয়ে হত্যার শিকার পারভিন আক্তার (৩৫) পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের গুদারপাড়া এলাকা মো. কায়েস উদ্দিনের স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার ভোররাতে উখিয়ার হাকিমপাড়া ও জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবিরের সি ব্লকে যায়। সেখানে তাদের সঙ্গে তোহা বাহিনীর ৫০-৬০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নুর হাকিম। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তাদের সেভ দ্য চিলড্রেনের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরে আলম জানান, পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

অপরদিকে, রোহিঙ্গা যুবকের হাতে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন কক্সবাজারের উখিয়ায় দোকান কর্মচারি ফোরকান আহমদ ওরফে কালু (২২)। এ ঘটনায় দোকানের টাকা লুট করে পালিয়ে যায় হত্যাকারি রোহিঙ্গা কর্মচারি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দোকান মালিক শাহ আলমকে থানায় নিয়ে গেছে।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উখিয়ার কোটবাজার দক্ষিণ স্টেশনের স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহ আলমের মালিকানাধীন একটি ডেকোরেশনের দোকানে স্থানীয় ফোরকান আহমদ ও এক রোহিঙ্গা কর্মচারীরা কাজ করতেন। প্রতিরাতের মতো তারা ঘটনার দিনও একসাথে ঘুমিয়ে ছিলেন।

কিন্তু ১০ জানুয়ারি ভোররাতের কোনো এক সময় ফোরকান আহমদ ওরফে কালুকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় রোহিঙ্গা কর্মচারী। এসময় দোকানে থাকা নগদ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় সে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

উখিয়া থানার ওসি আহমদ মনজুর মোরশেদ জানান, হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, টাকার লোভে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

একই দিনে কক্সবাজারের পেকুয়ায় পারভিন আক্তার (৩৫) নামের গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৯ সালে চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের তানজুক কাটা এলাকার কবির আহমদের মেয়ে পারভিন আক্তারের সাথে উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়া উপজেলার গুদারপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে কায়েস উদ্দিনের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

নিহতের পিতা কবির আহমদ ও বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগ, কায়েস উদ্দিন একজন জুয়াডি ও নেশাগ্রস্ত। জুয়া খেলা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। একই সাথে যৌতুকের জন্য প্রায় সময় মারধর করতেন কায়েস। রাতে কায়েস, ভাসুর আনোয়ার হোসেন ও শ্বাশুড়ি মাহফুজা বেগম মিলে পারভিনকে নির্যাতন করেন। খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।