কক্সবাজারে এত অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা কোথায়

মুহিবুল্লাহ মুহিব :

ফাইল ছবি

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তথ্যমতে, নতুন বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬টি বিদেশিসহ ৪১টি অস্ত্র, ১৩০টি গুলি-কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০টি, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৭ জন।

আধিপত্য বিস্তার, জলদস্যুতা, বনদস্যুতা ও নির্বাচনি সহিংসতার পর নতুন নতুন রোহিঙ্গা গ্রুপের বিরোধের কারণে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। তাই অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর তৎপরতায় উদ্বেগ বাড়ছে কক্সবাজারে।

গেল দুই মাসে কক্সবাজারের পেকুয়ার পাহাড়ে দুইটি সচল অস্ত্র কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। কারখানা থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলিসহ নানা সরঞ্জাম।

দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদেশি পিস্তলের ব্যবহার। কিন্তু হঠাৎ এত অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, নতুন বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬টি বিদেশিসহ ৪১টি অস্ত্র, ১৩০টি গুলি-কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০টি, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৭ জন।

এর মধ্যে, সবচেয়ে বেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৫। তিনটি বিদেশি পিস্তলসহ ২৩টি অস্ত্র, ৭৬টি গুলি-কার্তুজ উদ্ধার করেছে তারা। এদিকে ক্যাম্পে নিয়োজিত ১৪ ও ৮ এপিবিএন উদ্ধার করেছে দুটি বিদেশিসহ ৯টি পিস্তল, ২৪টি গুলি-কার্তুজ।

র‌্যাব-৭ পেকুয়া থেকে ৮টি অস্ত্র এবং সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে একটি বিদেশি অটোমেটিক মেশিনগান ও ৩০টি গুলি উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এছাড়াও র‌্যাব-১৫ ও র‌্যাব-৭ পেকুয়ার দুইটি কারখানা ধ্বংস করে দেয়।

পেকুয়ার অস্ত্র কারখানায় অভিযান শেষে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘একটি সচল অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। এসব কারখানায় চাহিদার ভিত্তিতে অস্ত্রগুলো তৈরি করা হয়। মূলত জলদস্যুতা, বনদস্যুতা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গা শিবিরেও এসব অস্ত্রের ব্যবহার রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা পুতিয়া গ্রুপের দুই সদস্যকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ক্যাম্পে ২৫ সদস্যের পুতিয়া গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে র‌্যাব।’

যে কোনো ধরণের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে র‌্যাবের তৎপরতা আরও বৃদ্ধির কথা জানান অধিনায়ক।

উখিয়ার ক্যাম্পে নিয়োজিত ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নাঈমুল হক বলেন, ‘বিদেশি পিস্তল বা দেশীয় অস্ত্র আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ব্যবহার হচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ক্যাম্পে অপরাধীরা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেষ্টা করে। ড্রোন বা অন্যান্য মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি।’

বালুখালী-পালংখালী এলাকায় ক্যাম্পের দায়িত্বরত ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কামরান হোসেন বলেন, ‘যে কয়টি ক্যাম্পে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে সেখানে অস্ত্রধারীরা প্রবেশের প্রতিনিয়ত বাঁধারমুখে পড়ছে। আমরা গ্রেপ্তারও করছি। কিছু কিছু ক্যাম্প বা ব্লক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় অভিযানের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। তারপরও প্রতি রাত-দিন আমাদের টহল অব্যাহত রয়েছে।’

এদিকে, গেল ২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে ১১ লাখ ইয়াবাসহ পাচারকারীদের ফেলে যাওয়া একটি অটোমেটিক মেশিনগান উদ্ধার করে কোস্টগার্ড।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রহমান জানান, অভিযান চলাকালীন আনুমানিক রাত ২টায় একটি ট্রলার তল্লাশি করে ১১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা, ৩০টি গোলা ও ১টি বিদেশি অত্যাধুনিক অটোমেটিক সাব মেশিনগান জব্দ করা হয়। এটি প্রথম কোনো ইয়াবা পাচারকারীদের কাছে পাওয়া বিদেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, উপকূলের শীর্ষ জলদস্যু পেকুয়ার কবির আটক হওয়ার পর তার কাছ থেকে জানা যায়, টৈটংয়ের পাহাড়ি এলাকা ঝুমপাড়ায় ডাকাত আবদুল হামিদের নেতৃত্বে একটি অস্ত্র কারখানা রয়েছে। যেখানে অস্ত্র তৈরি ও বেচাকেনা হয়।

এ কারখানায় তৈরি অস্ত্র চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করা হয়। দুই দিন অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক ও ৮টি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারলেও আবদুল হামিদ পালিয়ে যায়। সুত্র: নিউজ বাংলা