কক্সবাজারে কওমী মাদ্রাসায় বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টায় ‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজারে কওমী আকিদার বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা পরিচালনা নিয়ে কওমি মাদরাসা আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড-‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’ নামের একটি সংগঠনটি মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত এমন একজন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যা নিয়ে শীগ্রই এলাকাবাসী মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন বলেও জানান।

তারা এখন বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসা পরিচালনাকারী সদস্য, দাতা সদস্য ও এলাকাবাসী। ‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’ নামের সংগঠনটি কক্সবাজারের বিভিন্ন মাদ্রাসায় গিয়ে বৈঠকের নামে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

সংগঠনটি মাদ্রাসাগুলোকে নিজেদের আয়ত্ত্বে রেখে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছে। এমন ঘটনায় ইতিমধ্যেই কক্সবাজারের বৃহৎ তিন’টি কওমী আকিদার মাদ্রাসা রামু চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসা, কলাতলী লাইটহাউস দারুল উলুম মাদ্রাসা ও উখিয়ার ভালুকিয়া মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা নিয়ে বিশৃংখলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসা তিন’টিতে বর্তমানে অচলাবস্থা চলছে। এছাড়া বান্দরবানেও একটি মাদ্রাসা নিয়ে এমন অচলাবস্থা চলছে।

‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’ নামের ওই সংগঠনটি বর্তমানে কক্সবাজারের কয়েকটি মাদ্রাসায় গিয়ে বৈঠকের নামে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। গত ১৪ জুলাই তারা শহরের পাহাড়তলীর রহমানিয়া মাদ্রাসায় বৈঠক করে। কাল ১৭ জুলাই তারা শহরের সমিতিপাড়ার ইসলামিক রির্সাস সেন্টারে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় দু’গ্রুপে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘঠিত হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারে কওমী আকিদার অধিকাংশ মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হচ্ছেন হাটহাজারি মাদরাসার মহাপরিচালক ও মহান জাতীয় সংসদে পাসকৃত ‘আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামেয়াতিল কওমিয়্যা’ এর চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফি। কিন্তু অধিকাংশ মাদারাসায় একটি চক্র আল্লামা শাহ আহমদ শফি’র অগোচরে কয়েকজন মুহতামিমকে হাত করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। চক্রটি মাদ্রাসাগুলোকে জবর-দখলের মাধ্যমে নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে ভাবতে শুরু করে। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তারা মাদ্রাসাগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়।

কিন্তু স্থানীয় লোকজন এবং দাতা সদস্যরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতি দেখে প্রতিবাদ করেন এবং যথাযথ মাধ্যমে এর প্রতিকার দাবী করেন। এক পর্যায়ে চক্রটি মাদ্রাসা পরিচালনা থেকে আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে বাদ দিয়ে এসব মাদ্রাসা নিজেদের আয়ত্ত্বে নেয়ার চক্রান্ত শুরু করেন। অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত মুহতামিম ও চক্রের অন্য সদস্যদের সহায়তা দিয়ে আসছে ‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’ নামের ওই সংগঠনটি। সংগঠনটির সদস্যরা বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন মাদ্রাসায় গিয়ে বৈঠকের নামে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিচ্ছেন এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন।

মাদ্রাসা জবর-দখলের কারণে ইতিমধ্যেই চক্রটিকে উখিয়ার কোটবাজারের ভালুকিয়া মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত করেছে স্থানীয়রা। সেখানে মাদ্রাসাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে। সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের কলাতলী লাইট হাউজ দারুল উলুম মাদ্রাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে বাদ দিয়ে মাদ্রাসাটি দখলের চেষ্টা করা হয়। ওই ঘটনার মামলায় জেল খেটেছেন চক্রের বেশ কয়েকজন। এখনও লাইট হাউজ মাদ্রাসা নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। চক্রটি বর্তমানে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি রামু চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পরিচালনা কমিটি থেকে আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে বাদ দিয়েছে।

চক্রের সদস্যরা মাদ্রাসাটির মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষক, দাতা সদস্য ও এলাকাবাসীর নজরে এলে তারা ঘটনার তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য মুহতামিম মাওলানা সিরাজকে অপসারণ করে যোগ্য, মেধাবী ও হক্কানি একজন আলেম দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা এবং আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার দাবি জানান। বর্তমানে মাদ্রাসাটির এই অচলাবস্থা নিয়ে থানা, আদালত, উপজেলা প্রশাসন, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় একাধিক মাধ্যমে একাধিক মামলা ও বিচার-শালিস চলছে। উভয়পক্ষে চলছে দ্বন্ধ-সংঘাত।

আর চাকমারকুলের এই মাদ্রাসাটিতে মাদ্রাসার শিক্ষক, দাতা সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মতামত উপেক্ষা করে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে চক্রটি মাদ্রাসা দখলে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে। চক্রটির পক্ষে ইত্তেহাদুল মাদারিস কক্সবাজার-রামু শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহছেন শরীফ ও সদরের পিএমখালীর ধাওনখালী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ মুসলিম ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন চাকমারকুল মাদ্রাসার দাতা সদস্য ও এলাকাবাসী।

মাদ্রাসার শিক্ষক, দাতা সদস্য ও এলাকাবাসী জানান, চাকমারকুল মাদ্রাসায় মুহতামিম নিয়ে সৃষ্ঠ বিরোধে ইত্তেহাদুল মাদারিস নাম দিয়ে একটি চক্র মাদ্রাসার বিষয়ে খবরদারি চালাচ্ছে। তারা শহরের বিভিন্ন মাদ্রাসায় বৈঠক করে চাকমারকুল মাদ্রাসা নিয়ে উস্কানি দিচ্ছে। একই সাথে তারা মাদ্রাসা দখলের জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ অবস্থায় ইত্তেহাদুল মাদারিস নাম দিয়ে শহরের বিভিন্ন মাদ্রাসায় বসে যেভাবে উস্কানি ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা হতে থাকলে যে কোন মুহুর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের এ ধরণের বৈঠক অন্য পক্ষটি প্রতিহত করার ঘোষনা দিয়েছে।

এলাকাবাসী দাবী করেন, ইত্তেহাদুল মাদারিস নামের সংগঠনটি মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত এমন একজন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যা নিয়ে শীগ্রই এলাকাবাসী মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন বলেও জানান।