কক্সবাজারে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন আজ; সাড়ে ৪ লাখ শিশুকে খাওয়ানো হবে টিকা

বিশেষ প্রতিবেদক :

আজ ২২ জুন সারাদেশের মতো কক্সবাজার জেলাতেও শুরু হবে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন। জেলায় বসবাস ও ভ্রমণরত ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুদের খাওয়ানো হবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল। শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো, রাতকানা রোগসহ বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতেই এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোলা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম)। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে জরুরী মেডিক্যাল টিম। কোন স্থানে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর নেতিবাচক কোন সংবাদ এলেই টিমের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাটিতে যাবেন। উদ্ঘাটন করবেন এই গুজবের কারণ।

চলতি বছর জেলায় ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭২ শিশু খাবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল। তাদের মধ্যে ৬ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী শিশু রয়েছে ৫৫ হাজার ৮৪ জন। যাদের খাওয়ানো হবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল। অন্যদিকে ১২ মাস থেকে ৫৯ মাস (১বছর থেকে পাঁচ বছর) বয়সের শিশু রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৮৮ জন। যাদের খাওয়ানো হবে লাল রঙের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, কক্সবাজারের শিশুরা ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার সুফল পাচ্ছে। এখন এই জেলায় কোন রাত কানা শিশু দেখা যায় না। এই ক্যাপসুলে কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া নেই। ফলে ক্যাপসুল খাওয়া শিশুরা কোন ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হবে না। তবে, গুরুতর অসুস্থ কোন শিশু ক্যাপসুল খাওয়ার পর শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ক্যাম্পেইনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই কারণেই আমরা মুমূর্ষু শিশুদের ক্যাপসুল না খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পেইনের দিন খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন শিশুকে আগে থেকে খুলে রাখা কিংবা দাঁতের কামড় দিয়ে ছেড়া ক্যাপসুল খাওয়ানো না হয়। তাৎক্ষণিকভাবে কাঁচি দিয়ে কেটে শিশুদের ক্যাপসুল খাওয়ানো হলে তারা ওষুধের পরিপূর্ণ পুষ্টি সুবিধা পাবে। এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার ৭২ টি ইউনিয়নের ২১৯টি ওয়ার্ডে একযোগে বিনামূল্যে এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকিতে খাওয়ানো হবে এই ক্যাপসুল। বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভায় পৃথক ইপিআই কর্মসূচি চালু রয়েছে। ফলে পৌরসভায় অবস্থানরত শিশুদের এই টিকা পৌরসভা পরিচালিত বিভিন্ন স্থায়ী এবং অস্থায়ী কেন্দ্র কিংবা পৌরসভায় স্বাস্থ্য বিভাগের স্থাপিতব্য কেন্দ্রগুলো থেকে খেতে পারবে।

শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো নিশ্চিত করতে জেলায় এবার টিকাদান কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ৭৫টি অতিরিক্ত টিকাদান কেন্দ্র খোলা হবে। ফলে ৯টি স্থায়ী কেন্দ্র, ১৮’শ ৪০টি অস্থায়ী কেন্দ্রসহ এবার টিকাদান কেন্দ্র হবে সাড়ে ১৯ শতাধিক। এসব টিকদান কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার-পরিকল্পনা সহকারি, কক্সবাজার পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবক জেলায় অবস্থানরত শতভাগ শিশুকে ক্যাপসুল খাওয়ানো নিশ্চিত করবেন।

কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় ওই সময়ে জেলায় মা-বাবার সঙ্গে ভ্রমণরত শিশুরা যাতে ক্যাপসুল খেতে পারে সেজন্য খোলা হবে ভ্রাম্যমাণ টিকাকেন্দ্র। পর্যটন এলাকা, বাস স্টেশনসহ পর্যটকদের সমাগম ঘটে এমন এলাকায় কেন্দ্রগুলো ঘুরে ঘুরে শিশু পর্যটকদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি বাস স্টেশন ও ঘাটগুলোতে যাতায়াত করবে এসব ভ্রাম্যমাণ টিকা কেন্দ্র। পাশাপাশি জেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও স্থাপন করা হচ্ছে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র। যাতে শতভাগ শিশু ভিটামিন ‘এ’ টিকার আওতায় আসতে পারে