কক্সবাজারে সবজির মূল্য চড়া, কমেছে পেঁয়াজের দাম

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারের বাজারগুলোতে কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম কমলেও গত সপ্তাহের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। মাছের বাজার স্থীতিশীল হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে সবধরনের মাংসের দাম। তবে মুদিপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, চিনি, লবণের দাম না বাড়লেও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বেড়ে যাওয়া মসলা এখনও চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) শহরের বাহারছড়া বাজার, বড় বাজার, কানাইয়া বাজার, সদরের খরুলিয়া বাজার, উপজেলা ববাজ্রসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়েছে। তবে আমদানি বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কমেছে। এদিকে ক্রেতারা এসব অজুহাত মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, কার্যকরী বাজার তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী লাভবান হলেও বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

শহর ও সদরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সে হিসাবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। তবে কিছু কিছু বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা কেজি।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে ব্যবসায়ী বদিউল আলম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। দাম যেভাবে বেড়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল ঈদের আগে পেঁয়াজের কেজি ৮০-৯০ টাকা হয়ে যাবে। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম কমেছে। গত দুই সপ্তাহে কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। হঠাৎ দাম বাড়া-কমার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনে আমাদের কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

ঈদ আসতে দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে আদা, রসুন, গোল মরিচ, হলুদ, মরিচ গুড়া, জয়ত্রী, এলাচ, দারুচিনি। বাজারে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে, জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকায়, লবঙ্গ প্রতিকেজি ৮৫০ টাকা, গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়, জিরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, দারুচিনি ৪৫০ টাকায়। এছাড়া আমদানি করা চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি আর দেশি ১৩০ টাকা কেজি।

মসলা বিক্রেতা চটকি ছিদ্দিক বলেন, গত এক মাস ধরেই মসলা পাইকারি বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে অন্য বছরের তুলনায় বর্তমানে মসলার বাজার বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত সপ্তাহের মতো মানভেদে চড়া দামে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। মরিচের পর সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। গাজর ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

এছাড়া অন্যান্য সবজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহের মতো করলা, কাঁকরোল, উস্তা, ঝিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স, পেঁপে, পটল, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া বাজারে প্রতি আটি লাল শাক, মুলা শাক, কলমি শাক ২৫ টাকা, পুঁই শাক, লাউ শাক ৩০ টাকা, ধনে পাতা কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতো ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। আর কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছের দাম একটু কমেছে। বাজারে এখন বেশিরভাগে মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। ইলিশ ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ১০০০, কোরাল ৬০০থেকে ৮০০, এবং রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৫২ টাকা, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।