কক্সবাজারে সবজি চাষে বিপ্লব

এম. বেদারুল আলম :

গত বছরের সফল সবজি চাষের পর এবারো পুরোদমে মাঠে নেমেছে জেলার সবজি চাষিরা। সবজির দাম থাকায় শুরুতেই চাষিরা আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে আনতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ভাল দাম ও পাচ্ছে। সবজি চাষে কপাল খুলেছে জেলার লক্ষাধিক চাষির। সবজির দাম থাকায় এবং উৎপাদন উপযোগি আবহাওয়ার কারণে চলতি মওসুমে শীতকালিন শাক সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় লাখ টন শাক সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে জেলায় ৭০ শতাংশ সবজি চাষ শেষ হয়েছে।

এ বছর টন প্রতি সবজির দাম ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি। ফলে উৎপাদিত শীতকালিন শাক সবজির আর্থিক মূল্য প্রায় ১শ ৮০ কোটি টাকা। তবে এর পরিমান আরো বেশি হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কৃষি কর্মকর্তাদের নিবিড় পরিচর্যা, উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন, আগাম সবজির দাম ভালো থাকা, যথাযত সার ও বীজ বাছাইয়ের কারনে সবজির এ বাম্পার ফলন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবীদ আবুল কাশেম।

তিনি জানান, জেলার অধিকাংশ  সবজির চাষ হয়েছে চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার সদরে। অবশিষ্ট উপজেলায় ৪০ শতাংশ সবজি উৎপাদন হয়েছে। শীতকালিন সবজির দাম মওসুমের শুরু থেকেই চড়া হওয়ার কারনে চাষিরা লাভবান হচ্ছে বলে দাবি এ কর্মকর্তার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি গত বছর অক্টোবর মাসের শুরুতে কক্সবাজারে ৩৪ প্রজাতির শাক সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামে চাষিরা। সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৯০ হাজার চাষি সবজি চাষে জড়িত। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে আগামি মার্চ পর্যন্ত শীতকালিন সবজির মওসুম। এ বছর জমিতে আগাম ধান কর্তন হওয়ায় সবজি চাষিরা বাজারে সবজির দামের আশায় আগেভাগে সবজি চাষে নামে। এ বছর শীতকালিন সবজি চাষ হবে সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। দাম পাওয়া সবজিসমুহ হল মুলা, মরিচ, ফুলকপি, বাধাঁকপি , মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, মুলা শাক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, গতবছর শীতকালিন সবজি চাষ হয় ৮ হাজার ৫শ  হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১ লাখ ২০ হাজার ১৪২ মে.টন সবজি। চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টরে প্রায় দেড় লাখ মে.টন সবজি। আগামি মার্চে যেহেতু মওসুম শেষ হবে, সে পর্যন্ত চাষিরা অতিরিক্ত লাভবান হতে পারবে যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়। হেক্টর প্রতি ১০ জন করে প্রায় ৯০ হাজার চাষি শীতকালিন সবজি চাষে মাঠে রয়েছে। চলতি মওসুমে যেসব সবজি চাষ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, আখ, সরিষা, চীনাবাদাম, মসুর, মাসকলাই, ফেলন, অড়হর, পেয়াঁজ, রসুন, ধনিয়া, মরিচ, তরমুজ, খিরা, বাঙ্গী, মুলা, লাল শাক, পালং শাক, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সীম, লাউ, বরবটি, ঢ়েড়স, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, করলা, ফ্রন্সবিন, বাটিশাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফসল।
বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সারের বাজার উন্মুক্ত তথা সহজপ্রাপ্তির কারনে এবার শীতকালিন ফসলের ফলন বাম্পার হয়েছে বলে জানান সদরের কয়েকজন কৃষক।

বাজারে বীজ প্রাপ্তি সহজ, উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে চাষিদের নানা বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের কারনে গত বছরের চেয়ে এ বছর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, ঝিলংজায় এ বছর সবুজ সবজির বিল্পব ঘটেছে। বিশেষ করে বাঁকখালীর পাড়ে সবুজ সবজিতে ভরে গেছে। ভোরে বাংলা বাজারের বিভিন্ন অংশে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা ভীড় জমায় সবুজ সবজি কিনতে। জেলার বিভিন্ন বাজারে তাজা সবজি চলে যায় বাংলাবাজার থেকে। বিশেষ করে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। ঝিলংজা চান্দের পাড়ার ফুলকপি চাষি মিজানুর রহমান জানান, গত বছর ২ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছিলাম খুব ভাল ফলন হওয়ায় লক্ষাধিক টাকা বাঁচিয়ে ছিলাম এ বছর আরো দাম থাকায় মার্চের শেষ হতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তার মত প্রায় উক্ত গ্রামে ১০/১২ জন ফুল ও বাধাকপি চাষ করেছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, শীতকালিন ৩৪ প্রকার ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভজনক হয়েছে মুলা, বেগুন, টমেটো, বাধাঁকপি, ফলিকপি, ঢ়েড়স, মিস্টিকুমড়া, আলু, তরমুজ, মরিচ চাষ করে। মার্চের শেষ নাগাদ ২শ কোটি টাকার মত সবজি উৎপাদন হবে বলে মনে করেন জেলা কৃষি অফিস।