কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের খাদ্য সহায়তাসহ মানবিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারে অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা সহ মানবিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। করোনা ক্রান্তিকালে জেলায় গত দেড় মাসে এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ পরিবার। শিশু খাদ্য কিনতে ২১ লাখ টাকার পাশাপাশি জনগণকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে ৭৫ লাখ ৮৩ হাজার ১০৮ টাকা।
সরকারি সহায়তা ছাড়াও রাজনৈতিক দল, এনজিও, ব্যক্তি, সংগঠন ও সংস্থার মাধ্যমে জেলার ৮ উপজেলায় ৪৯ হাজার ৮১৭ জন উপকারভোগীর কাছে ১ কোটি ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা এবং দুই কোটি ৫৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৬ টাকা পরিমাণের বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সরকারি বরাদ্দ মিলেছে ১৮৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৯৬ লাখ নগদ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২৭ লাখ টাকা। জরুরী সেবার জন্য বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৩০০ টন চাল, ২০ লাখ ১৭ হাজার জিআর ক্যাশ ও শিশু খাদ্যের ৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে কক্সবাজারের জন্য সরকারি-বেসরকারি বরাদ্দ মিলেছে ১৮৫০ টন চাল ও ৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪৬ টাকা।

বুধবার (৬ মে) দুপুরে অনলাইন প্রেসব্রিফিংয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের করোনা সহায়তা প্রোগ্রামের সমন্বয়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, জেলার উপজেলা সমূহে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া চাহিদার ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত সুষ্টভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সুশৃংখল ভাবে উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ সম্বলিত ট্যাগ লাগিয়ে করোনায় কর্মহীন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে সহযোগিতা পৌছানো হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ে দেয়া তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, পরিবার সংখ্যা, দারিদ্রতা ও মাত্রা বিবেচনায় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি কর্তৃক করা তালিকা অনুসারে জেলার ৮ উপজেলা ও ৪ পৌরসভায় উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়। কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২৬ হাজার ১০২ পরিবারের জন্য ৩০২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন, রামুর ৮ হাজার ৪৫২ পরিবারের জন্য ১১৯ মেট্রিক টন, চশরিয়ার ৩১ হাজার ৮৯৯ পরিবারে ৩১৫ মেট্রিক টন, পেকুয়ার ১১ হাজার ৮২৬ পরিবারে ১১৮ মেট্রিক টন, মহেশখালীর ৯ হাজার ৫১৯ পরিবারে ১৫১ মেট্রিক টন, কুতুবদিয়ার ৬ হাজার ৫০৫ পরিবারে ১০০ মেট্রিক টন, উখিয়ার ৭ হাজার ৪৮৮ পরিবারে ৬৫ মেট্রিক টন ও টেকনাফে ৫ হাজার ৩৪২ পরিবারের জন্য ৬৯ মেট্রিক টন এবং কক্সবাজার পৌরসভার ১২ হাজার ৪৭৩ পরিবারে ১২৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন, চশরিয়া পৌরসভায় ১০ ৬৬৩ পরিবারে ১১ মেট্রিক টন, টেকনাফ পৌরসভার ৪ হাজার ৭০ পরিবারে ২২ মেট্রিক টন ও মহেশখালী পৌরসভায় ৩ হাজার ১০০ পরিবারে ৫২ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। আর আনুপাতিক হারে ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ১০৮ টাকা এবং শিশুখাদ্য কিনতে ২১ লাখ টাকা উপ-বরাদ্দ সরবরাহ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, চাহিদা পত্রের এ বরাদ্দ ছাড়াও জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের মোবাইলে পাঠানো মেসেজ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ৩৩৩ প্রভৃতি মাধ্যমে আসা খবরেও অসহায়দের বাড়িতে ত্রাণ পৌছানো হয়েছে।

এছাড়াও সারা দেশে ৫০ লাখ পরিবারকে মাসিক ২০ কেজি হারে চাল প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কক্সবাজার জেলায় ৭৫ হাজার পরিবার এ সুবিধার আওতায় আসবে। গত ২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক কক্সবাজারে ত্রাণ সমন্বয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ‘জেলায় কোভিড ১৯ সংক্রান্ত কার্যাবলী পর্যালোচনা’ সভায় সর্বশেষ জাতীয় আদমশুমারির জনসংখ্যা অনুযায়ী কক্সবাজারের বরাদ্দ বিভাজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী কক্সবাজার সদরে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ জনে ৯ হাজার ৫৫০ পরিবার, রামুতে২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ জনে ৮ হাজার ৭৩২ পরিবার, চশরিয়ায় ৪ লাখ ১ হাজার ৭৯৬ জনে ১৩ হাজার ১৫৯ পরিবার, পেকুয়ায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৮ জনে ৫ হাজার ৬০৯ পরিবার, মহেশখালীতে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৭ জনে ৯ হাজার ৬১০ পরিবার, কুতুবদিয়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৯ জনে ৪ হাজার ৯৬ পরিবার, উখিয়ায় ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭৯ জনে ৫ হাজার ৭৮১ পরিবার, টেকনাফে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৩ জনে ৬ হাজার ৮২৬ পরিবার এবং কক্সবাজার পৌরসভায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৭৭ জনে ৭ হাজার ৫৪৯ পরিবার, চকরিয়া পৌরসভায় ৭২ হাজার ৬৬৯ জনে ২ হাজার ৩৭৬ পরিবার, মহেশখালী পৌরসভায় ২৭ হাজার ৩২১ জনে ৮৯৩ পরিবার ও টেকনাফ পৌরসভায় ২৫ হাজার ৫৬ জনে ৮১৯ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা যাবে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক স্থানীয় ভাবে ত্রাণ বিতরণ হওয়ায় দুই উপজেলা হতে ২০০০ জন উপকারভোগীর তালিকা কক্সবাজার পৌরসভায় যুক্ত করা হয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে জেলায় লোকসংখ্যা ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯০ জন।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের মতে, ত্রাণ বিতরণে সম্ভাব্য উপকারভোগীর নির্ভুল তালিকা প্রণয়ন একটি কঠিন কাজ। কোন কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তির নাম তালিকা হতে বাদ পড়া, একই মানুষ একাধিক সুবিধা পাওয়া, বেনামী মানুষের অন্তর্ভূক্তি ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এ সমস্যা সমাধানে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এক্সেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচির সহায়তায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ চলছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সকল প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন পাশে রয়েছে। ঘরে বসে প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে চালু করা হয়েছে ‘ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল’। করোনা মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, সেনা ও নৌ-বাহিনী, এনজিও, রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্রসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবক, সাংবাদিক এবং স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারি কর্মচারীরা একসাথে কাজ করছেন। সামনের দিনগুলোতেও সকলের সম্মিলিত প্রয়াস কামনা করেন তিনি।