কক্সবাজার বছরে কমছে ১ হাজার হেক্টর কৃষি জমি!

মাহাবুবুর রহমান •

কক্সবাজার জেলায় প্রতি বছরে গড়ে এক হাজার হেক্টর কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। জেলায় বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ ৮৫৫৭১ হেক্টর যা ৪/৫ বছর আগে ছিল ৮৯ হাজার হেক্টর যে হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমছে। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি আশপাশের জমি গুলোতে চাষাবাদ কমে আসছে।

মূলত জেলার বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, কৃষিপণ্যের দাম কমে যাওয়া,কৃষি কাজের উপকরণ সহ সব কিছুর দাম বাড়তি এবং জমি সংক্রান্ত মামলার মোকাদ্দমার কারনেও কৃষি জমিতে আবাদ কমে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে জমি ও খাদ্য উৎপাদন কমছেনা বলে দাবী করছেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়াপাড়া এলাকার কৃষক আলী আকবর বলেন,আমার বয়স ৮০ বছরের বেশি,আগে আমি অন্তত ৫০ থেকে ৬০ কানি জমি চাষাবাদ করতাম। ১০/১২ বছর আগেও ১৫/২০ কানি জমি চাষাবাদ করেছি কিন্তু এখন ৫ কানির বেশি করতে পারি না। মূলত আগে কিছু জমি বর্গা নিতাম এখন সে সব জমির মালিক জমি ফেরত নিয়ে গেছে। আর আমার কাছে যা আছে তাও চাষ করিনা কারন বছর শেষে লোকসান থাকে। শ্রমিক খরচ,সার বীজ খরচ, যোগাযোগ, সব মিলিয়ে প্রতি কানিতে ধান যা পায় তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়। আমরা ধান বিক্রি করতে গেলে এক আরি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা নেয় কিন্তু মিল মালিকরা বিক্রি করে ৩৫০ টাকা।

ঈদগাঁও ইসলামপুর এলাকার চাষি রুহুল আমিন বলেন,আমার নিজস্ব ১২ কানি জমি আছে, তার মধ্যে এখন ২ কানির মত রেল লাইনে পড়েছে। সেই জমির ক্ষতিপূরনের টাকা তুলতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ এবং দালালদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে বিপুল টাকা নিয়ে ফেলেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে ২ কানি সরকার নিয়েছে কিন্তু কোন জমিতে চাষাবাদ করতে পারছিনা। কারন সেখানে রেল লাইনের মাটি ফেলে জমি নষ্ট করে ফেলেছে।

খুরুশকুল ছনখোলা এলাকার অবসর প্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন,আমি কয়েক বছর আগে এখানে কোন খালি জমি দেখতাম না,সব জমিতে ধান বা শীতকালিন সবজি চাষাবাদ হতো কিন্তু এখন তেমন চাষাবাদ হয়না বেশির ভাগ সময় জমি খালী পড়ে থাকে। কারন শীতকালীন সবজি চাষাবাদে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষকরা। কিন্তু বাজারে সব কিছুর দ্বিগুন বা ৩ গুণ দাম কিন্তু মাঠে কৃষকরা দাম পায়না। তাছাড়া এখন কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করছে স্থানীয় বাসিন্দারা এতেও জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে।

খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান ছিদ্দিকি বলেন,খুরুশকুলে বেশ কয়েকটি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প চলছে এতে অনেক কৃষিজমি পড়েছে। তাছাড়া আশাপাশের অনেকে কৃষিজমিতে ইটবালি পাথর রাখার কারনেও চাষাবাদ হচ্ছে না এটা সত্য।

রামু কাউয়ারখোপ ফলনিরচর এলাকার কৃষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন,আমার লেবু বাগান পেপে বাগান,শাক সবজির মাঠ আছে। বর্তমানে বাগানে একটা লেবু ৪/৫ টাক কিন্তু সেই লেবু বাজারে ১৫ টাকা,পেপে বাগানে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা সেটা বাজারে ১০০ টাকা,মাঠে শাক প্রতি আঠি ২ টাকা সেই শাক বাজারে ১৫ টাকা। তাহলে কেন আমরা চাষাবাদ করবো সব লাভতো ব্যবসায়িরা খেয়ে ফেলছে।

মিঠাছড়ি এলাকার বাসিন্দা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ফরিদুল ইসলাম বলেন,আমাদের এলাকাতে আগে যে দিকে চোখ যেত সব সবুজ আর সবুজ ছিল এখন ইটপাথরের হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে এমন ইট পাথরের দালান বা ঘরবাড়ি হবে কল্পনাও করিনি। আসলে জনসংখ্যার গতি কমাতে না পারলে কোন উন্নয়ন কাজে আসবে না। বর্তমানে বিলের মাঝে,খালের পাড়ে সব জায়গা বড় বড় ঘর গড়ে উঠছে এতে কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে।

এ ব্যপারে কক্সবাজার সুজন সহ সভাপতি অধ্যাপক আজিত দাশ বলেন,সম্প্রতী দেউলিয়ার তালিকায় নাম লেখানো পাশের দেশ শ্রীংলকার আজকের এই পরিণতির কারনে প্রথমে রয়েছে তারা কৃষি নির্ভরতা বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুকে পড়েছিল। রাষ্ট্রিয় ভাবেও কৃষিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। ফলে শ্রীলংকার মানুষ শতভাগ শিক্ষিত হয়েও দেশকে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে পারেনি। কারনে পেটে ক্ষুদা রেখে কোন উন্নয়ন কাজে আসবে না। তাই আমাদের কৃষি নির্ভরতাকে বেশি করে প্রাধান্য দিতে হবে। রাষ্ট্রিয় ভাবে কোন উন্নয়ন কর্মকান্ড যেন কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে সেই দিকে কড়া নজর দিতে হবে। তবে এটাও ঠিক মানুষ বাড়ার কারনে বসতি করতে গিয়ে কৃষি জমি কমছে।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন দাশ বলেন,উখিয়াতে কৃষি থেকে সব কিছুকে ধবংসের মূল কারন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। তাদের আবাসন করতে গিয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমি একেবারে শেষ হয়ে গেছে। কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ রোহিঙ্গাদের কারনে কৃষিকাজ করতে পারছেনা। তাই সময় থাকতে এসব বিষয়ে চিন্তা করার দরকার।

তবে সব আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড,এখলাস উদ্দিন বলেন কৃষি জমি কমছে সেটা একেবারে ঠিক নয়। ইদানিং অনেক নতুন নতুন অনাবাদি জমি আবাদ হচ্ছে। এখন বন বিভাগ এবং সরকারি খাস জমিতেও বেশ কিছু জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদন হচ্ছে,আবার ফলন ও ভাল হচ্ছে।