কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে সিগারেট

শাহীন মাহমুদ রাসেল

কক্সবাজার শহরের একটি দোকানে স্কুলের ড্রেস পরা একদল কিশোর। একজনের হাতে একটা নেভি সিগারেটের প্যাকেট। ভরদুপুরে স্কুলের টিফিনের সময়ে তারা এখানে সিগারেট ফুঁকছিলো। নাম পরিচয় এমনকি স্কুলের নামও গোপন রাখার শর্তে তারা জানায়, বন্ধুরা এক সাথে হলে দুষ্টামি করতে গিয়ে তারা ধূমপান করে। ধুমপানের জন্য তারা কি ধরনের সিগারেট পছন্দ করে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীদের একজন বলে, আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের পটেকের অবস্থা তেমন ভালো না। তাই কমদামি সিগারেটগুলো খাওয়া হয়। হাতের নেভি সিগারেটের প্যাকেট থেকে দুটো সিগারেট বের করে দেখালো এগুলো সেনর গোল্ড।

শুধু কক্সবাজার শহর নয়, একই অবস্থা জেলার অন্যান্য এলাকায়ও। এ সকল শিশু-কিশোরদের কাছে সিগারেটের ব্র্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাদের কাছে সিগারেট ফুঁকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য কম দামের সিগারেটের প্রতিই তাদের আগ্রহটা একটু বেশি। টিফিনের দশ টাকা থেকে এক টাকা বাঁচিয়ে সিগারেট ফুঁকাটা তাদের গায়ে লাগে না। বরং দাম কম হওয়ায় এই সিগারেটের প্রতি আসক্তিটা বেড়ে যায়।

কক্সবাজার শহর ও আশেপাশের এলাকায় দিনে দিনে বাড়ছে ধুমপায়ীদের সংখ্যা। ছেলেদের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে উঠতি বয়সের মেয়েরাও ধুমপানে আসক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আড়ালে আবডালে নিত্যই বসে ধূমপানের আসর। ছেলেদের ধূমপানের চিত্র সবখানে দেখা গেলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটি নয়। বিশেষ করে ‘অভিজাত’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই মেয়েদের আঙুলে আর ঠোঁটের ফাঁকে দেখা মেলে সিগারেটের। এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে ধুমপান করাকে অনেকটা বাড়তি একটা ‘স্ট্যাটাস’ হিসেবে মনে করছে তারা। নিজেদের অন্যান্য বন্ধু বান্ধব থেকে নিজেকে আলাদা হিসাবে উপস্থাপন করতেই অনেকে ধুমপান করছে বলে অভিযোগ অধুমপায়ী শিক্ষার্থীদের।

কথা হয় রামুর সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ, রামু ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাক আহামদের সাথে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে দিন দিন যেনো বেড়েই চলছে ধুমপানের ব্যাপকতা। নিয়মনীতি ভঙ্গ করে এসব ধুমপায়ীরা যে হারে নিষিদ্ধ জায়গায় ধুমপান করছে তাতে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পরিবেশকে কলুষিত আর বিরক্তিকর করে তুলছে। তিনি বললেন, জনসমাগমপূর্ণ পরিবেশে এমন ধুমপান করার ফলে পরিবেশের যেমন বিপর্যয় ঘটছে, পাশাপাশি ঘটছে স্বাস্থ্যহানিও। কক্সবাজার বক্ষ ব্যাধি হাসপাতাল, ডক্টরস চেম্বার, জেনারেল হাসপাতালে বাড়ছে ক্যান্সার সহ নানা শ্বাস কষ্টজনিত রোগির সংখ্যা যার বেশির ভাগই কিশোর কিশোরী।

চিকিৎসকদের সাথে আলাপে জানা গেছে, অল্প বয়সে যেসব ছেলেমেয়ে চোখে চশমা আর বুকের ব্যথায় ডাক্তারের শরনাপন্ন হচ্ছেন এদের বেশির ভাগই ধূমপান আর বিভিন্ন যন্ত্রের রেডিয়শনের শিকার। ধূমপান নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সরকারি অফিস, আদালত, রেলওয়ে স্টেশন, রেস্টুরেন্টসহ জনসমাগমস্থল তালিকাভুক্ত থাকলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নিষিদ্ধ স্থানেই প্রকাশ্যে চলছে ধুম্রসেবন। প্রকাশ্যে ধূমপানের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ।

সুশসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন বলেন, কক্সবাজার সহ সারা দেশে প্রকাশ্যে ধুমপানের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আইন প্রয়োগের দুর্বলতার কারণে ছাত্র, শিক্ষকসহ সকল পেশার মানুষের মাঝে ধুমপায়ীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখনই এ ব্যাপারে সতর্ক না হলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলেই মনে করেন তিনি।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. নুরুল আলম বলেন, একেকটি সিগারেটে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর নিকোটিন রয়েছে। যা ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ধুমপান শুধু ক্যান্সারেরই কারণ নয়, এর ফলে ব্রেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নানা রকম রোগব্যাধির উৎসও এই ধূমপান।

কক্সবাজার সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মুজিবুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রকাশ্যে ধুমপায়ী স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের ধূমপান থেকে ঠেকাতে প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। ছাত্রজীবনে যদি তারা নেশার পথ ধরে তবে তাদের সামনের জীবন সিগারেটের ধোঁয়ার মতোই অন্ধকার হয়ে উঠবে।