কক্সবাজার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেলের ফেসবুক স্ট্যাট্যাসে তোলপাড়

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেক বহিরাগত, স্বার্থন্বেষী, সেল্ফিবাজ ও যারা শুধু টাকার বিনিময়ে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক হয়ে গেছেন বর্তমানে।

তবে রাজনীতি জীবনে কোন দিনও সেসব সুবিধাভোগী নেতাদের ওয়ান ইলেভেন (ফখরুল/মইনুদ্দিন) আমলে বা নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের সময় রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করা তো দূরের কথা বরং বর্তমানে দলীয় সব প্রোগ্রামেও তাঁদের আন্তরিক উপস্থিতি দেখিনি বলে নিজ ফেইসবুক আইডিতে এমনটাই দাবি করেছেন কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ও সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী রাসেল আহমেদ নোবেল।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে এক প্রতিক্রিয়ায় কাজী রাসেল তাঁ নিজ ফেইসবুক আইডি থেকে একটি পাবলিক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন। বর্তমানে এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেয়া ওই সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেলের ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো –

”শুধু শুনতেছি, প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা যুগান্তকারী বেশ কিছু সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি। বর্তমানে দলকে শক্তিশালী করতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের যুক্তিগত আবদার পূরণের মাধ্যমে অভিমান ভাঙ্গিয়ে সম্মানের সাথে পুনরায় পার্টি অফিস ও রাজপথে নিয়মিত করতে।দয়া করে আওয়ামীলীগের নেতারা তা বাস্তবায়ন করা শুরু করুন।

কারণ, কক্সবাজারে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অনেক বহিরাগত, স্বার্থন্বেষী, সেল্ফিবাজ ও যারা শুধু টাকার জোরে জেলা- উপজেলাসহ বিভিন্ন কমিটির সভাপতি- সম্পাদক হয়ে গেছেন বর্তমানে। তবে রাজনীতি জীবনে কোন দিনও সেসব সুবিধাভোগী নেতাদের ওয়ান ইলেভেন (ফখরুল/মইনুদ্দিন) আমলে বা নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের সময় রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করা তো দূরের কথা, বরং বর্তমানে দলীয় সব প্রোগ্রামেও তাঁদের আন্তরিক উপস্থিতি দেখলাম না কোনদিনও।

কক্সবাজারের পৌর শহরের বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার আমলে বিরোধীদলীয় রাজনীতির সময় তৎকালীন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিব বদ্দা ( মুজিবুর রহমান, বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক) ও সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম গুন্দু ভাই এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক উজ্জল কর দাদার নেতৃত্বে শুধু মাত্র হাতে গুনা কয়েকজন নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চলমান ছিল প্রতিদিন।

দুঃখের সাথে বলতে হয়, সেই সময় অন্য কোন অঙ্গসংঠনের নেতাকর্মী তো দূরে থাক। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করেনি একদিন এর জন্যও। কিন্তু আজ তাদের চাপেই আমরা কোনঠাসা।

অথচ, সেই সময় আমার কাজী পরিবারের প্রায় সদস্য কতবার হরতাল পালন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল, তার কোন হিসেব নেই।যা গোয়েন্দা রির্পোটে অবশ্যই থাকবে।

আরও বেশি হতাশ হয়েছিলাম তখন, যখন এক সিনিয়র নেতা দলীয় পার্টি অফিসে আমি মুজিব ভাইকে ও গুন্দু ভাইকে পৌর আওয়ামী লীগকে অবহিত করি বিএনপির সাবেক এমপি কাজল ভাই এর বাসার সামনেই আমার বাসা এবং সেই কারনেই আমরা দুই ভাইয়ের দায়িত্ব ছিল কলাতলী রোড় এ শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের। সেই হরতাল পালন কালীন সাবেক এমপি বের হচ্ছিল প্যারাডো গাড়ি করে। তাই আমরা অনুরোধ করি দয়া করে আপনি হরতাল চলছে তাই গাড়ি রেখে বের হোন। তারপরই পুলিশ এসে আমাদের ধাওয়া করে।

কিন্তু আমরা নিজ অবস্থান থেকে সরে যায়নি একপাও। তাদের যে পরিমান পুলিশ ছিল, তার চেয়েও দশগুণ বেশি ছিলাম আমরা। তাই তারা সাহস করেনি হামলা করতে। কিন্তু আমার ভাই তৎকালীন পৌর আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ভাইকে বলে, যদি কেউ না সরেন তবে আপনাকে থানায় যেত হবে।

আমরা সবাই তখন চিৎকার ও স্লোগান দিয়ে হইচই শুরু করি। তখন মেজু ভাই আমাকে ডেকে বলে এটা পর্যটন নগরী এবং হোটেল মোটেল জোন সুতরাং কোন পর্যটক যাতে আতংকিত না হয়, শুধু সেটা খেয়াল রাখবি, কিন্তু রাস্তা থেকে একপাও সরে যাবি না।

আমি বলি কিন্তু তুমি? সে বলে তুই বাইরে থাকলেই হবে সেই পুলিশ গুলো আমরা দুইভাইকে গোল করে ঘিরে রেখেছে, আমার মেজ ভাই বর্তমান পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবু সে পুলিশ কে বলে প্রয়োজনে আমি থানায় যাবো। তবুও আমাদের হরতাল চলমান থাকবে এবং আপনারা বাঁধা দিবেন না প্লীজ।

আমি তখন স্বাভাবিকতা হারাতে থাকি। তা সে বুঝতে পেরে আমায় কানে কানে বলে যে কি, তুই তো বাইরে আছিস, আমার কোন মামলা নেই। জীবনে তাঁরা তুই থাকতে আমাকে কতক্ষণ আটকে রাখতে পারবে তা আমার জানা আছে রে ছোট।

বাবু ভাইকে যখন পুলিশ নিয়ে যায় তখন আমি সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করি এবং খবরটা ফোনে পার্টি অফিসে জানাই মুজিব বদ্দাকে। পায়ে হেঁটে হেঁটে আমি যখন সেখানে যাচ্ছি, সবাই তখন আমার সাথে যেতে চাচ্ছে। আমি সবাইকে বুঝাতে চেষ্টা করি যে, যদি আমরা রাজপথের এখানের অবস্থান ছেড়ে দেই, তবে তাঁরা জিতবে, আর আমরা হেরে যাবো।

সুতরাং প্রয়োজনে আমিও পিকেটিং টাইম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করবো। কারণ আমি হারাতে জন্মেছি, তাদের কৌশলে পরাজিত হতে নয়। তখন আমার বাবা খুবই অসুস্থ। ব্রেইন স্টোক করেন। আমি সবাইকে বললাম, বাসায় যেন খবর না যায় এই বলে দলীয় পার্টি অফিসে ডুকে সব খুলে বলি। ঠিক সেই সময় একজন নেতা বলেন, তোমরা পুরো পরিবারটাই বেশি বিপ্লবী মারাও সবসময়। এতো কাবিলাতি করলেতো পুলিশ ধরবেই। যদিও তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের নেতা।

তাকে কিন্তু এখনো আমি নয় শুধু ত্যাগীদের কেউ জীবনে কোনদিন মন থেকে একটা সালাম দিয়েছে কিনা সন্দেহ আছে আমার। তখন সেটা আমি তেমন গায়ে না মেখে, গুন্দু ভাই ও মুজিব ভাই এর দিকে তাকিয়ে আছি অসহায় দৃষ্টিতে!

এর সাথে সাথে মুজিব ভাই বলে উঠলো এই গুন্দু এখনো বাদাম খাবে! সাবাইকে আসতে বলো, আমার বাবু কে থানায় নিয়ে গেছে । অনেক হয়েছে আর নয়, এটা বলেছিল আমার বাল্য বন্ধু জুয়েল।

সেই সাথে ঐ যে ব্যালেন্স করে চলা ব্যাক্তি যে, বেশী বিপ্লবী হইছো তোমরা বলেছেন। উনাকে এক ধমক দিয়ে বলে তোমার জেতে হবে না। বাবুকে প্রয়োজনে আমরা থানা ঘেরাউ করে আনবো।

তখন যেই শান্তি পেয়েছি মনে আমার আর কিছুর দরকার বলে প্রয়োজন হয়নি।

সাথে সাথে “জেলের তালা ভাঙবো, বাবু ভাই কে আনবো। বাবু ভাই গ্রেফতার কেন প্রশাসন জবাব চাই।” বলে স্লোগান দিতে থাকে সবাই।

গুন্দু ভাই ওসির সাথে বাকযুদ্ধ করছে আর আমরা প্রধান সড়ক নিয়েছি পুরো নিয়ন্ত্রনে। তিন ঘন্টা পর তাঁরা থানা থেকে বাবু ভাইকে গুন্দু ভাইয়ের দক্ষ আইনি যুক্তিতে এবং সকলের রাজপথের শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

এবার সবাই একসাথে গুন্দু ভাই এর কন্ঠে বলে,

“উঠলো বাবু ভাই এর মুক্তি আন্দোলনের শক্তি”

তারপর আমরা পৌর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে এলাকার শত শত মানুষ সহ পুরো রাজপথে মিছিল করে বাবু ভাইকে নিয়ে যায়।

এটা বলার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বিরোধী দলেও আমরা অনেক শক্তিশালী দল ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু তৈরি করছি এখন। যা আমাদের বঙ্গবন্ধুর তনয়া, মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনার সরকার তথা আওয়ামী লীগকে আগামী প্রজন্মের জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।

দয়াকরে সকলে দৃষ্টি রাখবেন, কোন দূসময়ের সহযোদ্ধা যেকোন কমিটি গঠনে পদ-পদবীতে অবমূল্যায়ীত হচ্ছে কিনা!

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

কাজী রাসেল আহমেদ নোবেল
সদস্য, কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা)