কখনো তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, কখনো মন্ত্রী-নেতা

ডেস্ক রিপোর্ট •

ভুয়া পরিচয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎকারী এক সাইবার প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। নিজেকে মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন তিনি।

গ্রেফতার ব্যক্তির নাম আবু হোরায়রা ওরফে খালিদ। এসময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনসেট ও তিনটি ভুয়া নামে নিবন্ধিত সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, নাটোরের সিংড়া থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে খালিদকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার খালিদ প্রথমে ভুয়া নামে নিবন্ধিত সিমকার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম থেকে টার্গেট ব্যক্তির নম্বর সংগ্রহ করতেন। এরপর তিনি নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা, কখনো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, কখনো মন্ত্রী ইত্যাদি ভুয়া পরিচয় দিয়ে তাদের ফোন করতেন। তিনি নিজের কণ্ঠ পরিবর্তন করে ফোন করে বলতেন, ‘করোনাকালীন অর্থ সাহায্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। সেই ট্রাস্টে অর্থ প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করছেন।’ তারপর টার্গেট বা ভুক্তভোগী ব্যক্তি টাকা প্রদান করতে সম্মত হলে ভুয়া নামে নিবন্ধিত অনলাইন ব্যাংকিং নম্বর দিয়ে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করতেন।

‘যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রীর পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্সে টাকা চাইতেন, তাই অনেকে সেটিকে ভেরিফাই না করেই করোনায় সাহায্য মনে করে অনায়াসে টাকা দিয়ে দিতেন। এরকরম অসংখ্য ভিক্টিমের কাছ থেকে অসাধু উপায়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন খালিদ। এমন ভিক্টিমের তালিকায় অনেক এমপি ও একাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীও রয়েছেন।’

গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালের নাম ব্যবহার করে ওই উপায়ে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। বিষয়টি নজরে এলে এসএম কামাল প্রথমে থানায় একটি জিডি করেন। মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হলে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম প্রতারককে শনাক্ত করে এবং ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়। এরপর এসএম কামালের পক্ষে তার সহযোগী কার্তিক বিশ্বাস বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত নামে গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

তিনি বলেন, প্রথমে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এই প্রতারকের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নাটোরের সিংড়া থানা এলাকা থেকে আবু হোরায়রা ওরফে খালিদ নামে এই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার প্রতারক শুধু এসএম কামাল নয় আরও অনেক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনেক সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রী ও তাদের পিএস, এপিএস পরিচয়েও প্রতারণা করে আসছিলেন।

এমন প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তিনটি পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো-

১. সাইবার স্পেসে ব্যক্তিগত তথ্যাদি বিশেষ করে মোবাইল নম্বর পাবলিক করে না রাখা।
২. কেউ টাকা চাইলেই যাচাই না করে কোনোভাবেই অপরিচিত কাউকে টাকা না দেওয়া।
৩. তারপরও কেউ প্রতারণার শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হওয়া।