করোনা কি জানেনা রোহিঙ্গারাঃ আতংকে স্থানীয়রা

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑

করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয়ে আর আতংকে দিন কাটাচ্ছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। অথচ করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন আতংক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা টেকনাফে শরনার্থী শিবির গুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কনো প্রভাব নেই বললেই চলে।

সরেজমিনে গিয়ে সেই চিত্রটি সংবাদ কর্মিদের চোঁখে ধরা পড়েছে। ২১ মার্চ বিকালে টেকনাফে গড়ে উঠা বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, তারা আগের মতই নিজের ইচ্ছামত চলাফেরা করা, খেলাধুলা করা, চায়ের দোকানে আড্ডা মারা,এক ঘরে গাদাগাদি বসতি স্থাপনসহ সব কিছু চলছে আগের নিয়মেই। এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রন করার জন্য কোন ধরনের তৎপরতা রোহিঙ্গাদের মাঝে নেই।

অথচ এই মহামারি ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় করোনা প্রতিরোধে সতর্কতামুলক কোন চিত্র দেখা যায়নি। ক্যাম্পে বসবাসরত জড়ো হয়ে থাকা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক নির্ভয়ে চাপ জানিয়ে দিলেন “করোনা ভাইরাস কি আঁরা ন জানি! আঁরা ইনরে ন ডরাই! আল্লাহ যা গরে তা অইবো,চিন্তা গরি কি লাভ অইবো, রোগ দিয়েদে আল্লাহ, ভালাও গরিব আল্লাহ”

তবে এব্যাপারে সচেতন রোহিঙ্গারা জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে জেনেছে। তাদের অভিমত এ মুহূর্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে সবচেয়ে বেশি ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন আগের মতই নিয়মিত আনাঘোনা করে যাচ্ছে। সব কার্যক্রম আগের মতই নিয়ন্ত্রহীন।

তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষন করে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার সংবাদ কর্মিদের জানিয়েছেন, উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত শরণার্থী শিবির গুলো করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে প্রশাসন। তিনি বলেন নতুন কোনো বিদেশি ক্যাম্পে যেতে চাইলে প্রবেশ করার আগে তাকে ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। পাশাপাশি আগে থেকেই ক্যাম্পে থাকা বিদেশীদেরকে সরকারী নির্দেশনার আওয়তাই রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আনাঘোনা শিথিল করার জন্য নজরদারী বাড়ানো হয়েছে বলে দাবী করছেন।

টেকনাফ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রনের কোন প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। পাশাপাশি এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরিক্ষা করার মত কোন যন্ত্র ক্যাম্পে নেই বললেই চলে।

করোনার আতংক নিয়ে টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের অন্তর্গত মোছনী রেজিষ্ট্রাট রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন ৭৫ বছর বয়সি স্থানীয় বাসিন্দা ওমর মিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,
করোনা ভাইরাস নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে কোন প্রকার আতংক দেখা যাচ্ছেনা। তারা আগের মতই স্বাভাবিক রয়েছে। যার যেমন ইচ্ছা তেমন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রন রাখার জন্য ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদেরকে সচেতন করতে হবে। তাও যদি সম্ভব না হয় প্রবেশ মুখ গুলো ‘লক ডাউন’ করতে হবে। তানা হলে এই ভাইরাসটি মহামারি আকারে স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে বেশী সময় লাগবেনা।

এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাইফ, টেকনাফ থানার (ওসি) প্রদীপ,টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডাঃ টিটু চন্দ্র শীলসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা পালন করে যাচ্ছে কঠোর ভুমিকা। তারা করোনা নিয়ন্ত্রন করার লক্ষ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে কি পরিমান ক্ষতি হবে তার সম্পর্কে অত্র উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে লিফলেট বিতরন এবং মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করে দিচ্ছে।