কিশোর-যুবারাই হিংকন মাঝির ইয়াবা কারবারের ‘হাতিয়ার’

সমকাল ◑

স্কুল-কলেজপড়ূয়া কিশোর ও যুবাদের প্রথমে কাছে টেনে নেয় হিংকন মাঝি। তাদের সঙ্গে গড়ে তোলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এরপর তাদের হাতে তুলে দেয় সর্বনাশা ইয়াবা। বিনা পয়সায় মাসের পর মাস ইয়াবা সেবন করতে থাকে তারা। আসক্ত হয়ে পড়ার পর হিংকন চালে তার আসল চাল। একপর্যায়ে আসক্ত কিশোর-যুবাদের বিনা পয়সায় ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় হিংকন। তখন ইয়াবা সেবনের টাকার জন্য পরিবারের ওপর অত্যাচার শুরু করে তারা। ইয়াবার নেশায় তারা যোগ দেয় হিংকন মাঝির দলে। ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ সেই দল হিংকনের ইয়াবা ব্যবসার প্রধান ‘হাতিয়ার’।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বহেরার চালা এলাকার গিয়াস উদ্দিন মাঝির ছেলে হিংকন মাঝি তার গড়ে তোলা বাহিনীর সদস্যদের পাঠাতে থাকে বিভিন্ন এলাকায়। তরুণরা ফেরি করে বিক্রি করতে থাকে ইয়াবা। ইয়াবার ডিলার হিসেবে পরিচিত হিংকন মাঝির হাতে গড়া সেই বাহিনীর সদস্যদের কেউ কিছু বললেই তার ওপর নেমে আসত নানা অত্যাচার। শ্রীপুর পৌরসভার বহেরার চালা ও কড়ইতলা এলাকা ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিংকন মাঝির লোকজন প্রকাশ্যেই ইয়াবা বিক্রি করত। এলাকাবাসী বারবার প্রতিবাদ করেছে। হিংকন মাঝির বাবা গিয়াস উদ্দিনও বারবার এলাকাবাসীর কাছে তার ছেলের অপকর্ম বন্ধের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রশাসনের কাছেও গিয়ে নালিশ করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সর্বশেষ হিংকন মাঝির ইয়াবা ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ান পার্শ্ববর্তী মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামের শিক্ষক রাসেল রানা। যার মাশুল তাকে দিতে হয়েছে জীবন দিয়ে।

বারতোপা শিশু কানন বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক রাসেলকে শেষ পর্যন্ত পৃথিবী থেকেই বিদায় করে দিয়েছে হিংকন মাঝি। রাসেল রানা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইমরান মণ্ডল আদালতে জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের জন্য হিংকন মাঝিকেই প্রধান দায়ী করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে ডেকে নির্জন জায়গায় নিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে মোবাইল ফোনের আলো জ্বেলে প্রথম দফা শিক্ষক রাসেলকে পেটায় ইমরান মণ্ডল ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে তারা বিষয়টি হিংকন মাঝিকে জানায়। তখন হিংকন তার সুবিধাজনক স্থানে রাসেলকে পৌঁছে দিতে বলে। শ্রীপুর উপজেলার বিলাইঘাটা এলাকার লবণদাহ খালের পাড়ে অপেক্ষা করছিল হিংকন ও তার বাহিনীর সদস্যরা। রাসেলকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরপরই পিটিয়ে হত্যা করা হয়। লোহার রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে রাসেলের দেহ থেকে প্রাণ বের করে ফেলে ঘাতকরা।

এই হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে হিংকন মাঝি। তবে শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেছেন, খুব শিগগিরই হিংকন মাঝি গ্রেপ্তার হবে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

বহেরার চালা এলাকার লোকজন জানান, হিংকন মাঝি পুরো এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। কত তরুণকে যে সে ধ্বংস করে দিয়েছে, তার হিসাব নেই। ইয়াবা বিক্রি করে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে হিংকন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ হত্যা মিশনে হিংকন মাঝিসহ তার পালিত ৯-১০ তরুণ অংশ নেয়- এমন তথ্য পেয়েছেন তারা। খুব শিগগিরই তারা গ্রেপ্তার হবে।