কৌশলে নৌপথে ঢাকায় নেয়া হয় ১২ কেজি আইস, সোনাদিয়ার পাঁচ যুবক গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট •

মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নৌপথে একাধিক বোটে করে আনা হয়েছিল ১২ কেজি আইস।

যার মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। জেলে ছদ্মবেশে সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে আইসের একেকটি চালান নৌকায় করে আনতে সময় লাগতো ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো। সোনাদিয়া দ্বীপসহ ওই এলাকায় জেলের সংখ্যা বেশি থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব নৌকা চিহ্নিত করা বেশ কষ্টসাধ্য।

তবে তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া এলাকা থেকে আইস চোরাকারবারি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩২), মকসুদ মিয়া (২৯), মো. রিয়াজ উদ্দিন (২৩), শাহিন আলম (২৮) ও শামসুল আলম (৩৫)‌। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১২ কেজি আইস, ১ লাখ পিস ইয়াবা, দুটি বিদেশি পিস্তল, ৪ হাজার ৬২০ পিস চেতনানাশক সিডাকটিভ ইনজেকশন, ১ লাখ বার্মিজ মুদ্রা ও পাঁচটি মোবাইল ফোন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আইস সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সোনাদিয়া দ্বীপ এলাকার একজন লবণ ব্যবসায়ী। লবণ ব্যবসার আড়ালে মিয়ানমার থেকে আইস এবং ইয়াবা চালান নিয়ে এসেছে সে। আইসের জন্য মিয়ানমারের চোরাকারবারীদের প্রথমে মোট অঙ্কের ২০ থেকে ৩০ ভাগ টাকা দিতে হতো। বাকি টাকা পরে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হতো। গত পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে জসীমউদ্দীন ইয়াবা পাচারের সাঙ্গে জড়িত থাকলেও গত একবছর ধরে আইস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সে।

অভিযানের সময় আমরা পাঁচ জনকে গ্রেফতার করলেও এ সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের আরও ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতার শাহীন আলম জসিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে সাগর ও নৌপথে মাদক পরিবহনের মূল দায়িত্ব পালন করে। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মানব পাচার ও মারামারি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার অপর সদস্য শামছুল আলমের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার মকসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে। শাহীন, সামসু ও মকসুদ মাদক বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতো। গ্রেফতার রিয়াজ উদ্দিন মাদক পরিবহনে নজরদারির জন্য স্কর্ট বোটে অবস্থান করে স্কর্টিং এর দায়িত্ব পালন করে।’

র‌্যাব জানায়, ‘এই চক্র মূলত সোনাদিয়া-কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় কৌশলে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা অবৈধ মাদক ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা পৌঁছাতো। তারা মূলত নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে পার্শ্ববর্তী দেশে মায়ানমার থেকে মাদক নিয়ে আসতো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে তারা নৌপথকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করতো।

যেভাবে আনা হতো আইস
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগর পথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদ স্থলে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা ২০-২৫ দিন জেলে ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে থাকে। মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে।

বহন করা ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি সোনাদিয়া থেকে দুটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়ায় ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবার চালান নিয়ে আসতো।

র‌্যাব আরও জানায়, এভাবে বহন করা মাদকের চালান হাতিয়ায় পৌঁছালে চক্রটির হাতিয়ার সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মাদকের চালান সংরক্ষণ করতো। পরে পুনরায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেঘনা নদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া/ঢাকার আশপাশে অথবা সুবধিাজনক স্থানে পৌঁছাতো।

ঢাকা ছাড়াও এরা বরিশাল, পটুয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করতো। মাদকের চালান মুন্সীগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র আইস ও ইয়াবার চালান গ্রহণ করে এবং সড়কপথে বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

উল্লেখ্য, নৌপথে মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য চক্রটি ২টি বোট ব্যবহার করে থাকে। সামনের বোটটিকে নজরদারি করতে ব্যবহার করতো এবং পরের বোটটিতে মাদক বহন করা হতো।

মোবাইল অথবা টর্চ লাইট সিগন্যালের মাধ্যমে উভয় বোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতো। পথে নজরদারিতে নিয়োজিত স্কর্ট বোট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মুখীন/সন্দেহজনক কিছু আঁচ করতে পারলে পেছনের মাদকবাহী বোটকে সংকেত দিতো পালিয়ে যেতে।