ক্যাম্পে ফোন করলেই মিলছে পারিবারিক সমস্যার সমাধান!

ইমরান আল মাহমুদ:
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পাঁচবছর না হতেই ক্যাম্পে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা। বাড়ছে পারিবারিক কলহ,সৃষ্টি হচ্ছে ঝগড়া বিবাদ। কিন্তু বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনে তেমন ফলপ্রসূ সমাধান মিলছেনা। থেকে যায় অভ্যন্তরীণ কলহ ও দ্বন্দ্ব। যা একসময় রূপ নেয় দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায়। যা রোহিঙ্গাদের নিজেদের মুখ থেকে শুনা যায়।

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯ এর ত্রিশ বছর বয়সী রুবায়দা দীর্ঘদিন যাবত স্বামীর সংসার করে আসছে। স্বামীর বাড়ির লোকজন পুত্রবধু হিসেবে তাকে তিরস্কার করে আসছে এবং স্বামী নিজেই অন্যত্র চলে যায় বলে অকপটে নির্যাতনের কথা জানান প্রতিবেদককে।

রুবায়দার মা জানায়,দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রীর এ সমস্যা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছি। পরে ৮ এপিবিএন’র দ্বারস্থ হয়। সেখানে চালু করা নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক এর মহিলা পুলিশ সদস্যকে খোলামেলাভাবে পারিবারিক সমস্যার কথাগুলো বলার পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাথে সাথে যোগাযোগ করে স্বামী ও তার পরিবারের সাথে।

রুবায়দাদের ব্লকের হেড মাঝি জানায়,ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ পারিবারিক সমস্যাগুলোর ঘটছে বিচ্ছেদ ও নানা ঘটনা। যার কোনো সমাধানের পথ ছিলোনা। অনিশ্চিত এ সমস্যার সমাধানের জন্য ৮আর্মড পুলিশের চালু করা হটলাইন নাম্বারে ২৪ ঘন্টার যেকোনো মুহুর্তে ফোন দিলে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করে দু’পক্ষের সাথে বসে সমাধান করে দেওয়া হয়। ফলে প্রতিটি ক্যাম্প থেকে সাধারণ রোহিঙ্গারা এই হেল্প ডেস্ক থেকে সেবা নিতে আসছে।

৮ এপিবিএন’র তথ্য বলছে, এ বছরের মার্চ মাসে পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পে যাত্রা শুরু হয় নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে হেল্প ডেস্ক। হেল্প ডেস্ক এর হটলাইনে ফোন দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সেবা নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। গত সাড়ে চার মাসে প্রায় এক হাজারের মতো রোহিঙ্গা নারী পারিবারিক সমস্যার সমাধান নিয়েছে বলে পুলিশের তথ্যে উঠে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ফোন দিয়ে তাদের নির্যাতনের কথা জানাচ্ছেন দায়িত্বরত নারী এপিবিএন সদস্যকে। রোহিঙ্গা ভাষায় সমাধানের জন্য চেষ্টা করছেন এ পুলিশ সদস্যও। সাথে আরও দুজন নারী পুলিশ সদস্যও একসাথে নির্যাতনের বর্ণনা ও ফোন করা অভিযোগকারীদের নাম ঠিকানা লিখছেন। পরে অভিযুক্তদের ব্লকের মাঝি ও ভিকটিমদের ডেকে মাঝিদের সহযোগিতায় পারিবারিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন হেল্প ডেস্কের দায়িত্বরত নারী পুলিশ সদস্যরা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পে চালু করা হেল্প ডেস্ক এর এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ এপিবিএন’র অগ্রণী ভূমিকা। ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) মো. কামরান হোসেন বলেন,”আন রিপোর্টেড জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স সহ নারী ও শিশুদের প্রতি যে সকল সহিংসতা ঘটে থাকে সেগুলোকে তুলে এনে বিচারের মুখোমুখি করাই আমাদের মুল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। হেল্প ডেস্ক এর হটলাইনে ফোন করে গত চার মাসে প্রায় এক হাজারের মতো নারী সেবা নিয়েছে। এক্ষেত্রে যেগুলো সালিশী কার্যক্রম এর মাধ্যমে সমাধানযোগ্য সেগুলো সালিশের মাধ্যমে,অন্যথায় থানার মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।”