খুনের বছর পর এনজিও কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার ৪০ ফুট গর্ত খুঁড়ে!

ডেস্ক রিপোর্ট •


চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তক্ষক দেয়ার নাম করে হেলাল উদ্দিন (৩৭) নামের এক এনজিও কর্মকর্তাকে অপহরণের পর হত্যা করেছে একটি সংঘবদ্ধ তক্ষক ব্যবসায়ী চক্র। হত্যার এক বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র সহায়তায় নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের নুরপুর এলাকায় প্রায় ৪০ ফুট গর্ত খুঁড়ে হেলাল উদ্দিনের লাশের সন্ধান পায় পিবিআই টিম। নিহত হেলাল উদ্দিন চাঁদপুরের দক্ষিণ মতলব উপজেলার নাগদা গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে ও এনজিও সংস্থা ‘সেতু বন্ধন’র ম্যানেজারের দায়িত্বরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, নিহত হেলাল ও তার এক বন্ধুকে কম দামে তক্ষক দেয়ার নাম করে ফটিকছড়িতে এনে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তাদের পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে তার বন্ধুকে ছেড়ে দিলেও চাঁদা না পাওয়ায় হেলালকে হত্যা করা হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর হেলালকে হত্যা করে উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের নুরপুর এলাকার ৪০ ফুট গভীর গর্তে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর নিহত হেলালের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা পিংকি বাদি হয়ে ভূজপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তেমন অগ্রগতি না দেখে হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী চলতি বছরের মার্চ মাসে পিবিআই-এ আবেদন করেন। এতে শেষ পর্যন্ত ছদ্মবেশী পিবিআই সদস্যদের ফাঁদে ধরা দেয় বিল্লাল নামে স্থানীয় এক তরুণ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল হেলালকে হত্যা ও লাশ গুমের তথ্য দেয়ার পর শুরু হয় লাশ উদ্ধারের তৎপরতা। দীর্ঘ এক বছর পর ওই এলাকায় পিবিআই’র বিশেষ টিম লাশ উদ্ধারে কাজ করে সফল হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর হতে তারা কাজ শুরু করেছে। গহীন পাহাড়ি পথে মাইলের পর মাইল হেঁটে তারা ঘটনাস্থল খুঁজে পায়। স্কেভলেটরের সাহায্যে একটি বড় ক্যানল তৈরি করে জেনারেটরের সাহায্যে আলোর ব্যবস্থা করে ওই গর্তের মাটি খুঁড়ে প্রায় ৪০ ফুট পর্যন্ত গেলে নিহত হেলাল উদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। লাশের উপরিভাগ কিছুটা ভাল থাকলেও নিচের দিক গলিত বলে জানা যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী রামগড়-বাগানবাজার ও হেঁয়াকোর গহীন জঙ্গলে বিপুল পরিমাণ তক্ষকের বাস রয়েছে। এর কোনো আর্থিক মূল্য না থাকলেও বিভিন্ন গুজব রটিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে এখানে এনে জিম্মি করে রাখত। যাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ পাওয়া যেত না তাদের হত্যা করে জঙ্গলে লাশ গুম করা হতো।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের পিবিআই পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন কৌশলে আমরা বিল্লাল নামে একজনকে আটক করি। তার মাধ্যমে গহীন পাহাড়ি পথে মাইলের পর মাইল হেঁটে আমরা হত্যাকা-ের স্থানটি খুঁজে পাই। ৫০ ফুট গর্তের প্রায় ৪০ ফুট পর্যন্ত খুঁড়ে লাশের সন্ধান পেয়েছি। আইননানুগ নিয়মে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।