ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে চারজনের প্রাণহানি, গাছপালা-ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত


ডেস্ক রিপোর্ট • ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সারা দেশে প্রায় শতাধিকের অধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জেলায় এই ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।
পটুয়াখালী:

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পটুয়াখালীতে ভারী বর্ষণের সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে জেলার মির্জাগ‌ঞ্জের উত্তর রামপুরা গ্রা‌মে হামেদ ফকির নামে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। বসতবাড়ির ওপর গাছ পড়ে ঘর ভেঙে তার মৃত্যু হয়। মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আনোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত গাছ পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া জেলার কোথাও কোন ধরনের প্রাণহানি ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা:

বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে খুলনায় অন্তত দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের একজন উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার প্রমিলা মন্ডল (৫২)। অন্যজন দিঘলিয়া উপজেলায় আলমগীর মিস্ত্রী (৩৫)।

রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ দাকোপে গাছ চাপায় এ নারীর মৃত্যু ঘটে। একই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের ৯নং কাতানিপাড়া গ্রামে আলমগীর মিস্ত্রী গাছ চাপায় নিহত হন।

দাকোপ‌ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, নিহত প্রমিলা দক্ষিণ দাকোপের প্রাধমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারে রাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

সকালে তিনি সাইক্লোন শেল্টারের পাশে নিজের বাড়িতে গিয়ে রান্না শুরু করেন। এ সময় ঝড় শুরু হলে তার বাড়ির পেছনের একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই প্রমিলা মন্ডল মারা যান।

অন্যদিকে, দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দমকা বাতাস শুরু হলে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের ৯নং কাতানিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে গাছচাপায় মারা যান আলমগীর মিস্ত্রী।

ভোলা:

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভোলায় আহত হয়েছেন ১৫ জন। এছাড়া ভোলার লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি।

‘বুলবুলের’ প্রভাবে ভোলায় দমকা হাওয়াসহ মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘর-বাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অধিকাংশ এলাকায়।

বরগুনা:

বরগুনা সদর উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হালিমা খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’এর কারণে তিনি উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ডিএল কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শনিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিচুর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হালিমা খাতুন নামের ওই নারী অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন।

বরগুনার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে এবং খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বিঘ্নিত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

মেহেরপুর:

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে গেল দুদিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে মেহেরপুরে। তবে রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর রাত থেকে কমেছে বৃষ্টি। হালকা বাতাস প্রবাহিত হলেও, বৃষ্টি না হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে চাষিদের মনে। তবে সর্বশেষ দুদিনের বৃষ্টি ও বাতাসের প্রভাবে মাঠে থাকা আমন ধান নুইয়ে পড়েছে।

জেলার বিভিন্ন মাঠ আমন ধানে পরিপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান কাটার উপযোগী। সপ্তাহ খানেক আগে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ সপ্তাহ থেকে পুরোপুরি কাটা ও মাড়াই শুরু হতো। কিন্তু বৃষ্টির প্রভাবে এ কাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। অপরদিকে বাতাসের প্রভাবে মাঠের পর মাঠের ধান মাটির সঙ্গে নুইয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পাকা ও আধা পাকা ধানও রয়েছে। মাঠের যে দিকে নজর যায় সেদিকেই ধান গাছের নুইয়ে পড়ার দৃশ্য।