চকরিয়ায় মামলা ছাড়াই প্রয়াত সাংবাদিক পরিবারকে ধরে নেওয়ার হুমকি!

চকরিয়া প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে প্রয়াত সাংবাদিক ছিদ্দিক আহমেদের পরিবারের সদস্যদের মামলা ছাড়াই পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে কোর্টে চালান দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকতা।

গতকাল ১৯ জানুয়ারী সকালে পুলিশ কর্মকর্তার মুঠোফোন থেকে প্রয়াত সাংবাদিকের স্ত্রীর মুঠোফোনে হুমকির কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। হুমকিদাতা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো: জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি চকরিয়া থানার অধীনে হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ৫৯ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডে পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পরিচয় দিয়ে প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক আহমদের স্ত্রী হাছিনা খানমের মুঠোফোনে ফোন করলে সেটি রিসিভ করেন সাংবাদিকের ছোট ছেলে আরশাদ।

এসময় পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম হুমকির সূরে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘এই হাছিনা খানম না। আমি হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর বলছি। তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। জমিতে কেন কাজ করতেছো। তোমরা কাজ বন্ধ কর। না হয় আমি পুলিশ পাঠিয়ে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে আসবো এবং কোর্টে চালান করে দেবো।

প্রয়াত সাংবাদিক পরিবারকে মুঠোফোনে হুমকি প্রসঙ্গে অভিযুক্ত চকরিয়ার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকের পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু লোক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ফাঁড়িতে অভিযোগ করেছে। আমি তাদের ফাঁড়িতে আসতে বলেছি। মামলা ছাড়া পুলিশ পাঠিয়ে ধরে এনে কোর্টে চালান দেওয়ার কথা কেন বলেছেন জানতে চাইলে তিনি আর মন্তব্য করেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখীল গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেন এর ছেলে প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক আহমদের বাড়ীর অদূরে বিএস খতিয়ান ২৮০ এর আন্দরে ১একর জমি রয়েছে। উক্ত জমি বিগত ০৮-০৮-১৯৫৬ইংরেজী তারিখে ১৫৮নং দলিলমূলে সাংবাদিক ছিদ্দিক জীবদ্দশায় ক্রয় করেছিলেন। জমি ক্রযের পর থেকে সাংবাদিকের পরিবার ভোগদখলে করে আসছেন। বিগত ২০১৫সালে সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক মারা যান। মারা যাওয়ার পূর্বে জাতীয় দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবিএম ছিদ্দিক আহমদ। প্রয়াত সাংবাদিকের স্ত্রী হাছিনা খানম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের পাশ্ববর্তী উপজেলা লোহাগাড়ার জমিদার পাড়া গ্রামের আবদুল গফুরের ইন্দনে হারবাং ইউনিয়নের করমুহুরী পাড়া গ্রামের কালা মিয়ার পুত্র শাহ আলম, আবদুল হামিদের দুই পুত্র কালা মনু ও আনোয়ার কবির ১একর জমি জবর দখলের জন্য চেষ্টা করছে। এরাই হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসির মাধ্যমে আমার পরিবারের সদস্যদের মামলা ছাড়া গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে।

তিনি আরো জানান, পুলিশ কর্মকর্তার হুমকিতে এখন আমার পুরো পরিবার চরম অসহায় হয়ে পড়েছি। আমি প্রশাসনের সহায়তা চাই।

তিনি আরো জানান, বিগত ২০১৯ ইংরেজীতে আমার বড় ছেলে মারুফের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী হয়েছিল।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস চট্টগ্রাম সিএমপিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছুটি নিয়ে বাড়ী আসার পথে গত ২০২২ সালের ১৭ জুন রাত ৮ টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি বাজার এলাকায় হানিফ বাসের চাপায় আমার ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মারুফ মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। কয়েক বছরের ব্যবধানে স্বামী ও বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এই সুযোগে আমার স্বামীর রেখে যাওয়া দালিলিক ১একর সম্পত্তি ভূমিদস্যুরা জবর দখল করতে চায়। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।