চকরিয়ায় চুরির অপবাধ দিয়ে মা-ছেলেকে তিনদিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া •

কক্সবাজারের চকরিয়ায় চুরির অপবাধ দিয়ে চার বছরের শিশু ও মা-ছেলেকে তিনদিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতরা হলেন, চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কোচপাড়ার মৃত মো. রফিকের স্ত্রী রশিদা বেগম (৩২) তার ছেলে মো. রিপন (১৬) ও মেয়ে রাজিয়া বেগম (৪)। চকরিয়া পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ড পালাকাটায় এ ঘটনা ঘটে।

রবিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে মা-ছেলে ও শিশুকে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আটকে রেখে মারধরের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার রশিদা বেগম বাদি হয়ে সোমবার (১৯ অক্টোবর) নায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আয়ুব আলীসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়।

এদিকে উদ্ধারকৃতদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা থাকায় পুলিশ তাদেরকে আদালতের কাছে সোপর্দ করলে আদালত মা-মেয়ে ও ছেলের জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে সোমবার দুপুরে মো. হার“নর রশীদ নামের এক ব্যক্তি বাদি হয়ে মা ও ছেলেকে আসামী করে থানায় চুরির মামলাটি দায়ের করেন।

নির্যাতনের শিকার রশিদা বেগম বলেন, আমার ছেলে রিপন চকরিয়া শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাসটার্মিনাল এলাকায় আমড়া বিক্রি করে সংসার চালায়।

বাসটার্মিনাল এলাকায় গত দেড় মাস আগে আয়ুব আলী নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি কুলিং কর্ণার চুরি হয়। গত শুক্রবার সকালে আমার ছেলে রিপন উখিয়ায় তার খালার বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওইদিন বিকালেই সেখান থেকে আয়ুব আলীসহ ৫জন লোক আমার ছেলেকে চুরির অপবাদ দিয়ে হাত বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে উখিয়া থেকে চকরিয়া উপজেলার পালাকাটা এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে আয়ুব আলীর বাড়ির একটি কক্ষে ছেলেকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে তারা। পরে বিষয়টি মোবাইল ফোনে আমাকে জানানো হলে আমি আমার ৪ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তখন সেখানে আমাদেরও আটকে রাখে আয়ুব আলী ও তার লোকজন।

নির্যাতনের শিকার রশিদা বেগম আরও বলেন, তিনদিন আটকে রাখার পর ১০-১২জন নারী-পুরুষ আমাদেরকে পালাক্রমে ব্যাপক মারধর করে। তারা আমাদেরকে গাছের বাটাম ও বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পিটিয়ে সমস্ত শরীর তেঁতলিয়ে দেয় এবং শাররীকভাবে নির্যাতন চালায়। এ সময় আমার ৪ বছরের মেয়েকেও আমার কাছ থেকে একদিন আলাদা করে রাখেন তারা। এছাড়া আমাদেরকে ঠিকমত খাবারও দেওয়া হয়নি। রশিদা বেগম বলেন, আমাদের নির্যাতনের ছবি মোবাইলে ধারণ করে চুরির বিষয়ে স্বীকারেক্তি আদায় করে তিনশত টাকার নন জুড়িশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয় আয়ুব আলী ও তার লোকজন।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, রবিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ড পালাকাটা এলাকা থেকে মা- মেয়ে ও ছেলেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। মা-ছেলের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা থাকায় তাদেরকে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটকে রেখে মা ছেলেকে মারধরের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার রশিদা বেগম বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় আয়ুব আলীসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।