চকরিয়ায় শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে ৪৮টি মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের আয়োজন

রাজু দাশ, চকরিয়া •


প্রকৃতিতে ধুপের গন্ধ, ফুটেছে পারিজাত কাশ ফুল আর পেজা তুলোর মত শরতের মেঘ জানান দিচ্ছে চলে এসেছে শারদ উৎসব, বাঙালি সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুর্গাপূজা।

কক্সবাজার চকরিয়ায় দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পূজার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।

এবার দেবীদুর্গা মর্ত্যলোকে ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মঙ্গল সংগীতে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেবেন। আর দোলায় ছড়ে দেবলোকে ফিরে যাবেন। তবে সরকারি নিদের্শনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী (১১ অক্টোবর) সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগররা। এই উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে পূজার মণ্ডপ গুলোতে প্রস্তুতি প্রায় শেষ পথে। উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে পূজামণ্ডপগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। প্রশাসনের সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

উপজেলা বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়,
উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দির গুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি। ইতি মধ্যে খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে দুর্গাসহ নানা প্রতিমার কাঠামো তৈরী শেষে এখন চলছে প্রতিমায় রং দেয়ার কাজ। শিল্পী নিপুণ হাতে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশসহ নানা প্রতিমা।

আগামী ১১-১৫ অক্টোবর ৫ দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে এসে প্রতিমা তৈরি ও রং তুলির কাজ করছেন। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাক-ঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা। বৈশ্বিক করোনা মহামারি অনেকটা কম থাকায় দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সকল সনাতন ধর্মালম্বীরা।

প্রতিমা শিল্পী সুজন চক্রবর্তী জানান, দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যস্ততা বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিমা গুলোকে কিভাবে আরো সুন্দর করা যায় সেটা নিয়েই ব্যস্ততা। ইতিমধ্যে আমাদের প্রতিমার মাটির কাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এরপর তুলির ছোঁয়া, রং করে প্রতমিা মন্ডপে সাজানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে দিয়ে তবেই শেষ হবে ব্যস্ততা। দু’এক দিনের মধ্যে শেষ হবে রং তুলির আঁচড়। প্রতিমাগুলো মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে সকল প্রতিমা তৈরীর কাজ।

তিনি আরো বলেন, প্রতিমা তৈরীর উপকরণের দাম বাড়লেও ক্রেতারা প্রতিমার দাম বলছেন কম। বাধ্য হয়ে প্রতিমা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খুব একটা লাভের মুখ দেখছি না।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ বলেন, এবছর উপজেলার ৪৮টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৪৩টি মন্ডপে ঘট পূজা অনুষ্টিত হবে। এর মধ্যে চকরিয়া পৌরসভায় ৭টি, উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে ৮টি, কাকারায় ৩টি, বরইতলীতে ৬টি, হারবাংয়ে ৮টি, সাহারবিলে ২টি, ডুলাহাজারায় ৭টি, খুটাখালীতে ১টি, চিরিংগা ইউনিয়ন ১টি, কৈয়ারবিলে ৩টি ও পূর্ব বড় ভেওলায় ২টি মন্ডপে পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসবমুখর করতে পূজামণ্ডপগুলোতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। কেন্দীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরিধান করে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে পূজা উদযাপন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে পূর্বের ন্যায় সুষ্ঠ-সুন্দর উৎসবমুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি সকলেই যাতে পূজার আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে ব্যাপারে প্রত্যেকটি মন্ডপ পরিচালনা কমিটিকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় থাকবে বলেও জানান তিনি।

চকরিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে আইন শৃংখলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তিন স্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ডপের দায়িত্ব দিয়ে নিয়মিত টহল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি এবারের পূজায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবেনা। তবে এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বৈশিক করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারনে গত বছরের তুলনায় এবারেরও পূজা সরকারী নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসব কে সামনে রেখে দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটি ও সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সাথে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় সভা করা সম্পন্ন করা হয়েছে।

দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা সনাতন ধর্মালম্বীদের।